ঢাকা শহরের রাস্তায় হাটার সময় আপনারা হয়তো দেয়াল বা বিদ্যুৎ খাম্বাতে বিভিন্ন পোস্টার লাগানো দেখেছেন যেখানে লেখা আছে- অর্শ, পাইলস , গেজ – এক ফাইলেই যথেষ্ট! এরকম পোস্টার ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে গেলেও দেখা যায়। পাইলস বা অর্শ রোগ বাংলাদেশের অনেক মানুষেরই হয় কিন্তু অনেকে “চক্ষুলজ্জা”র কারনে তা প্রকাশ করেনা এবং গোপনে এই টোটকাগুলো ব্যবহার করে সরল মনে। যারা একটু সচেতন তারাও “চক্ষুলজ্জায়” কাওকে বলে না এবং একসময় খুব গুরুতর অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। এই পর্বে আসুন জেনে নেই পাইলস রোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য যা পাইলস রোগ সম্বন্ধে আরো সচেতন করে তুলবে আপনাকে।
পাইলস কী ? পাইলস হওয়ার কারন :
পাইলস বা অর্শ হচ্ছে পায়ু পথের এক ধরণের রোগ যখন পায়ুপথের ভেতরে অথবা বাহিরে এক প্রকার মাংসপিন্ড ফুলে থাকে। এই মাংসপিন্ড অনেক ছোট হয় যেখানে রক্তনালী, সাপোর্ট টিস্যু, মাংস এবং ইলাস্টিক ফাইবার থাকে। পায়ু পথের বাহিরে যে পাইলস হয় সেগুলো সাধারণত ২-৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। একই সাথে পায়ুপথের ভেতরে এবং বাহিরে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
কারনসমূহঃ
- নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভুগলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।
- বেশি মাত্রায় ডায়রিয়া হলে।
- খুব ভারী কিছু উঠালে।
- গর্ভধারণের কারনেও হয়ে থাকে।
- মল ত্যাগের সময় অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করা হলে।
- বয়স বেশি হয়ে গেলে পায়ুপথ দুর্বল হতে থাকে যা পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
কীভাবে বুঝবেন পাইলস হয়েছে?
- পাইলস হলে যদি পায়ুপথের বাহিরের দিকে পাইলস হয় তখন দেখা যায় পায়ুপথে জ্বালাপড়া করছে এবং মাংস ফুলে আছে। মল ত্যাগের সাথে রক্ত দেখা যেতে পারে।
- মল ত্যাগের পর মনে হবে যে মল ত্যাগ এখনো অসম্পন্ন।
- আঠালো শ্লেষা জাতীয় মল হতে পারে।
- কাঁটা কাঁটা অনুভব হতে পারে মলদ্বারে।
- মলত্যাগের পর ব্যাথা এবং অস্বস্তি কাজ করতে পারে।
পাইলস গুরুতর হলে যা হতে পারেঃ
- অনেক সময় রক্তপাত হয় আর বেশি গুরুতর হয়ে গেলে অতিরক্তপাতের কারনে রক্তস্বল্পতা দেখা যায় রোগীর শরীরে।
- ইনফেকশন
- ফিস্টুলা হতে পারে যার ফলে পায়ুপথের কাছের বাহিরের ত্বক এবং এর ভেতরের অংশের মাঝে আলাদা একটি চ্যানেল তৈরি হয়।
- পায়ুপথ বা তন্ত্রে ক্যান্সার।
পাইলসের চিকিৎসাঃ
পাইলস রোগ হওয়ার পর ব্যাথানাশক কিছু ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু যেসকল ব্যাথানাশক এ opioid আছে তা গ্রহণ করা যাবেনা কারন এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পাইলসের জন্য বাজারে সহজলভ্য কিছু মলম, ক্রিম এবং সাপোজিটার আছে যার মধ্যে থাকে অনুভুতিনাশক (Anaesthetic) উপাদান যেমন Lidocaine. Corticosteroids জাতীয় স্টেরইড হরমোন আছে যেমন Anusol HC এবং Proctosedyl যা পাইলসের ফোলা এবং ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। তবে এক সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করা যাবেনা তা না হলে পায়ুপথের বাহিরের ত্বকের ক্ষতি করে।
অনেক সময় সার্জারি দরকার হয়। দেখা যায় প্রতি দশ জনের মধ্যে একজনের সার্জারি করা প্রয়োজন হয়। এগুলো হলো-
ব্যান্ডিং- পাইলসকে ঘিরে একটি ইলাস্টিক ব্যান্ড দিয়ে দেয় যার ফলে পাইলসে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং পাইলসটি পরবর্তীতে ঝরে পরে যায় ১-২ সপ্তাহে।
স্ক্লেরোথেরাপি- চিকিৎসক কিছু তৈল জাতীয় মিশ্রণ পাইলসে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দিবে যা পরবর্তীতে ফোলা অংশকে নামিয়ে দিবে।
অবলোহিত রশ্মির ব্যবহার- এর মাধ্যমে পাইলসের মধ্যে অবলোহিত রশ্মি প্রদান করা হয় যা অর্শের টিস্যুকে ধ্বংস করে দেয়।
আরো কিছু জটিল সার্জারি চিকিৎসকরা করে থাকেন যা চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা বুঝে প্রয়োগ করেন।
পাইলস প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে যা ব্যবস্থা নিবেনঃ
- প্রথমত উচ্চ মাত্রায় আঁশ আছে এমন জাতীয় খাদ্যে যেমন, শাকসবজি, ফল, শস্য ইত্যাদি খাওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। খাদ্যাভাস পরিবর্তন এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা প্রতিকারের জন্য অতীব দরকারি।
- পানি খাওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে বা পানি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখতে হবে।
- ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে। এটি মল স্বাভাবিক রাখতে অনেক কাজে দেয়।
পাইলস রোগ নিয়ে কথা বলতে অনেকে হীনমন্যতায় ভুগেন যা আপনাদের রোগকে খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। পাইলস থেকে অনেক সময় ইনফেকশন এবং ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খুব দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় কখনো কবিরাজি টোটকার দিকেও ঝুকবেন না কারন এসকল টোটকায় থাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। পাইলস কোনো দুরারোগ্য অসুখ না তব এই রোগ লুকিয়ে রেখে হেলাফেলা করার মতনো নয়। সঠিক সিদ্ধান্ত এবং সঠিক উপায়ে জীবনযাপন করলে পাইলসের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন সহজেই।
তথ্য সহায়িকাঃ
১। https://www.medicalnewstoday.com/articles/239454.php
২। https://www.bupa.co.uk/health-information/digestive-gut-health/haemorrhoids
৩। https://www.prothomalo.com/home/article/51458/অর্শ-রোগে-টোটকা-নয়