ভ্যাপিংঃ সিগারেটের বিকল্প নাকি মরণফাদ?  Banner Photo

Ω author: Shakhawat Hossain Akash

 718  1  0

 ভ্যাপিং বা ই-সিগারেট বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিগারেটের চেয়ে কম উপকারী কিংবা ধূমপান থেকে বেরিয়ে আসার একটি বিকল্প হিসেবে। যখন বলা হয়ে থাকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যে ভ্যাপিং ধূমপান থেকে বেরিয়ে আসার একটি সহজ উপায় তখন অনেকেই যাচাই বাছাই না করেই এই ভ্যাপিং ব্যবহার করছে। ভ্যাপিং এর উপাদান কী বা ভ্যাপিং কি আদৌ ধূমপানের বিকল্প হতে পারে কি না এই নিয়ে বিস্তারিত কোনো ভ্যাপিং উৎপাদনকারী কোম্পানি উপস্থাপন করেনি। ভ্যাপিং এ নিকোটিং পুড়ে যাওয়ার বদলে বৈদ্যুতিকভাবে গরম হয় যা বিক্রেতারা প্রচার করছেন এভাবে যে, কম ক্ষতিকর কিংবা সিগারেট খাওয়ার যে রকম ঝুঁকি থাকে এখানে তা নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো আসলে কতটুক সত্য তা সকলের জানা প্রয়োজন আছে। আসুন এই পর্বে জেনে নেই ভ্যাপিং সম্পর্কে কিছু তথ্য।

ভ্যাপিং নিয়ে মানুষের সাধারণ ধারণাঃ 

ভ্যাপিং বাজারে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে সিগারেট বা তামাক জাতীয় দ্রব্যের থেকে কম ক্ষতিকারক বা উত্তম বিকল্প হিসেবে। ভ্যাপ এ পানির মাধ্যমে গরম হয় নিকোটিন যা কম ক্ষতিকর। ভ্যাপ এ টার জমা হয়না এবং ফুসফুসে কম ক্ষতি করে। দেখা যায় প্রতি ১০ জনে একজন ধূমপায়ী সিগারেট ছেড়ে দিতে চায়। তাদের কথা মাথায় রেখে ভ্যাপিং এর মার্কেটিং সেভাবে করা হয়। তাই সেসকল মানুষও ভ্যাপিং এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমি কয়েকজন তরুণের সাথে কথা বলেছি ভ্যাপিং এর ব্যাপারে। তারা ভ্যাপিং ব্যবহার শুরু করার কারণ হিসেবে বলেছে যে, ভ্যাপিং সিগারেটের তুলনায় অনেক কম ক্ষতিকর। কিছু তরুণ বলেছে তারা সিগারেট ছেড়ে দিতে চায় কারণ তারা শুনেছে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার জন্য ভ্যাপিং অনেক কার্যকরী। দেখা যাচ্ছে, ভ্যাপিং নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা তাই অনেক তরুণ ধারন করেছে। 

ভ্যাপিং এ নানা রকম লোভনীয় স্বাদ যুক্ত করা হয় যা মানুষকে আকৃষ্ট করে আরো। বিশেষ করে কম বয়সী তরুণরা আকৃষ্ট বেশি হয় এবং এই স্বাদগুলো তাদের নেশায় আসক্ত হতে আরো বেশি প্রভাবিত করে। ১২-১৭ বছরের কিশোরদের মাঝে এই ফ্ল্যাভার বা স্বাদ এর প্রতি আলাদা আকর্ষণ কাজ করে। সিগারেটের যে গন্ধ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় সেখানে এই মুখরোচক গন্ধ এবং স্বাদ ভ্যাপের দিকে আকৃষ্ট করে তুলে। 

ভ্যাপিং কীভাবে ক্ষতি করছেঃ

  • একটি ভ্যাপ বা ই-সিগারেটের অন্যতম একটি উপাদান হলো নিকোটিন যা নেশা আসক্তকারী রাসায়নিক উপাদান। নিকোটিন তরুণ যুবক, শিশু এবং গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই তাদের ভ্যাপিং ব্যবহার থেকে বা পরোক্ষ ভ্যাপিং থেকে সাবধান থাকা লাগবে।
  • ভ্যাপিং এ সাধারন সিগারেটের মতো ৭০০০ এর বেশি ক্যামিকেল থাকে না কিন্তু ভ্যাপিং এর মধ্যে যে নিকোটিক থাকে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। নিকোটিন এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • ভ্যাপিং এ নিকোটিনের পাশাপাশি ডায়াসিটল ( Diacetyl) থাকে যা ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পাশাপাশি ভলাটাইল ওরগানিক কম্পাউন্ড থাকে, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বিভিন্ন উপাদান, ভারী পদার্থ যেমন, নিকেল, লেড, টিন থাকে যা শরীরের সরাসরি প্রবেশ করে এবং নানা রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। 
  • যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাপিং প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৪ সালে ১২৫ মিলিয়নের মার্কেটিং পলিসি নিয়েছিল ভ্যাপিং এর জন্যে। পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে ১২-১৭ বছরের তরুণদের ৮০ শতাংশ ভ্যাপিং ব্যবহার শুরু করে। দেখা যাচ্ছে যে, সিগারেটের বিকল্প হিসেবে হাজির করে ভ্যাপিং এর মাধ্যমে ধূমপানের একটি নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে এবং ধূমপানকে স্বাভাবিকীকরণ করার একটি প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে তরুণ সমাজের মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়।  ২০১৮ তে এসে ভ্যাপিং এর ব্যবহারের অত্যাধিক মাত্রা বেড়েছে। 


কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজনঃ 

  • ভ্যাপিং কখনো সিগারেট বা তামাক ধূমপানের বিকল্প হতে পারে না। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে ভ্যাপিং এর নিকোটিন একটি নেশা সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান। এটি কোকেইন, হেরোয়িন এর মতো ভয়ানক আসক্তি-সৃষ্টিকারী। 
  • গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অনেক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেয়ার জন্য ভ্যাপিং ব্যবহার শুরু করেও দেখা যায় যে সাধারণ ধূমপান এবং ভ্যাপিং উভয়ই ব্যবহার শুরু করে। অর্থাৎ, ভ্যাপিং ব্যবহার করে ধূমপান ছেড়ে দেয় এমন কোনো শক্তিশালী প্রমান আমাদের হাতে এখনো পৌছায়নি। তাই ভ্যাপ উৎপাদনকারী কোম্পানির প্রচারনায় সরল বিশ্বাস করা সমীচিন হবে না। 
  • শুধুমাত্র সিগারেটই নয়, ভ্যাপ এর কারনেও ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতি হয় যা ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে। তবে কিছু গবেষণার কথা মাথায় রাখা উচিত। ২০১৯ সালে আমেরিকাতে ভ্যাপ ব্যবহারকারী ২০০ রোগীর CDC রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে তাদের ফুসফুসের সংকটপূর্ণ অবস্থা ভ্যাপিং এর কারনে। এমনকি আশঙ্কা করছেন অনেক গবেষক যে, ভ্যাপিং এর কারনে ফুসফুসের ক্ষতি সিগারেটের থেকেও বেশি হতে পারে। এই নিয়ে এখনো আরো গবেষণা চলছে। 


বাজারমুখী ব্যবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকার জন্যে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসে ব্যবসায়িকরা, ভ্যাপ তেমনি একটি পণ্য। ভ্যাপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মুখরোচক অনেক বাণী শুনিয়ে ধূমপান ত্যাগের তেলেছমাতি উপায় হিসেবে মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। কম বয়সী তরুণরাও কম বয়সে নিকোটিনের মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি ফুসফুসের মারাত্মক ঝুঁকিও দেখা যায়।  ভ্যাপিং এর ক্ষতির মাত্রা আপাত দৃষ্টিতে কম ক্ষতিকর মনে হলেও এর স্বাস্থ্যঝুঁকির নানা রকম নমুনা গবেষকরা পাচ্ছেন। এখনো এই নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। তবে মোদ্দাকথা হলো, ভ্যাপিং কে সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ধরে নেয়া ঠিক হবে না এবং অন্যকেও এই ব্যাপারে সচেতন করে গড়ে তুলুন।


Share On Facebook

please login to review this blog and to leave a comment.


More From Hia

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

published on: 01 Jun, 2021

প্রথমবারের মত ...

 32669    4    0 
ডেঙ্গুঃ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধ!

published on: 21 Jul, 2019

এই বর্ষায় বৃষ্টির সাথেখিচুড়ি তাে উপভােগ করবেনই, তবে আপনারা যাতে সুস্থতার সাথেতা করতে পারেন তাইগুরুত্বপূর্ণ এক...

 8982    2    0 
এবারের ডেঙ্গু কেনো অন্যবারের চেয়ে আলাদা?

published on: 22 Jul, 2019

এবারের ডেঙ্গু কেনো আলাদা?: এবারের ডেঙ্গু জ্বরের সাথে আগের মিল নেই। নতুন কোন শক্তিশালী ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ছড়ানো এই অসুখ এবার ঢাকায় রীতিমতো মহামারি ...

 8655    2    0 

More From Health & Lifestyle

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

author: Sadia Tasmia

প্রথমবারের মত ...

 32669    4    0 
আপনি কী শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত?

author: Hasnat Zahan Shapla

অনেক সময়ই আপনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর আবারও গিয়ে চেক  করে আসেন যে আসলেই ব...

 6548    1    0 
কোন সমস্যার জন্য রয়েছে কোন ডাক্তার? | পর্ব ২

author: Sadia Tasmia

প্রথমবারের মত কোনো রোগের

 6368    3    0