
শরীর ও মন পরস্পর নির্ভরশীল তা
আমরা প্রত্যেকেই জানি। সুস্বাস্থ্যের জন্য কোনটিই কম প্রয়োনীয় নয়। তবে শারীরিক
স্বাস্থ্যের প্রতি যতটুকু আমরা নজর দেই, তার একভাগও হয়তো দেই না মানসিক
স্বাস্থ্যের প্রতি। শুধু যে নজর দেই না তা নয়, কোনরকম চাপ বা মানসিক অবসাদের
সম্মুখীন হলে তা নিজেদের মধ্যে যতোটা সম্ভব চেপে রাখি, রাগ করে অন্যদের দূরে সরিয়ে
রাখি এবং এমন একটি সময়ে এসে প্রকাশ করি যখন তা দ্বারা আমরা বড় কোন ক্ষতির সম্মুখীন
হয়ে পড়ি। এই প্রবণতাটি মেয়েদের থেকে আরো বেশি কাজ করে ছেলেদের মধ্যে। “ছেলেদের
কাঁদতে হয় না”, “মেয়েদের মতন করিস না” বা ইংরেজিতেও একটা জনপ্রিয় বাক্য “Be a man!” এই সকল বাক্যই মূলত বলা হয় ছেলেদের আবেগ,
চাল-চলন, কথা-বার্তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। সমাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে একজন পুরুষের
আচরণগত বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত এবং একজন নারীরই বা কেমন হওয়া উচিত। এমন ভাবলে সমস্যা কোথায়? আসুন তাহলে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা কেন প্রয়োজন, না করলে কী
হবে এবং আপনি কীভাবে এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন তা জেনে নেই।
সমাজ নির্মিত ছেলেদের লিঙ্গীয় অবস্থানঃ
সমাজ নির্মিত ছেলে ছেলেদের মতন এবং মেয়ে মেয়েদের মতন আচরণের বাহিরে অন্য কোনরকম আচরণ প্রদর্শন করলে তা উভয়র জন্যই সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, সমাজ ছেলেদেরকে স্ট্রং রোল প্লে করার দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে। ছেলেরা বিশ্বাস করে যে তারাই পরিবারের কর্তা। তাই
কোনো ছেলে তাঁর মানসিক অবসাদ নিয়ে কথা বলতে চাইতে সংকোচবোধ করেন। তার মাথায় কাজ
করে থাকে যে “লোকে কি বলে না বলে”। মানসিক/ আবেগজনিত সকল ব্যাপার “মেয়েলি” স্বভাব বলে ধরে নেয়া হয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একজন পুরুষ সামাজিক চাপের কারনে মানসিক সমস্যা বা অবসাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে এবং এর ফলে তার মাঝে সৃষ্টি হয় নানা রকম মানসিক
জটিলতা।[i]
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বিরতঃ
সামাজিক চাপের কারনে স্বভাবতই একজন পুরুষ মানসিক চিকিৎসা করা হতে বিরত থাকে। এর কারনে একজন ছেলে নিজেকে নিয়ে যেতে পারে ডিপ্রেশনের মাঝে। ইংল্যান্ডের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে প্রতি ৮ জনের মাঝে ১ জনের মধ্যে মানসিক সমস্যা থাকে। এদের অধিকাংশই আবার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন না। দেখা গিয়েছে ইংল্যান্ডে ৩৬% ছেলে মানসিক চিকিৎসা নিতে যায়, বাকিরা লুকিয়ে রাখে কিংবা দেখা যায় অ্যালকোহল, ড্রাগস এ আসক্ত হয়ে পড়ে।[ii] ডিপ্রেশনগ্রস্থ অনেক ছেলে তাই আসক্ত হয়ে পড়ছেন নানা রকম নেশাজাতীয় দ্রব্যে।
আত্মহত্যাঃ
মানসিকভাবে সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে তা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেসকল মাধ্যমের আশ্রয় নেয় তন্মধ্যে অন্যতম
হলো আত্মহত্যা। গ্রেট ব্রিটেনে ২০১৭
সালের আত্মহত্যা রেকর্ড এর ৭৫ শতাংশ ছিলো পুরুষ এবং এদের বয়স ছিলো অধিকাংশের ৫০ এর
নিচে।[iii] গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিম্ন
আয়ের মানুষ, বেকার যুবক, সমকামী, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার
প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। আর্থসামাজিক সংগ্রামে জর্জরিত হয়ে মানসিকভাবে
ক্ষতিগ্রস্থ হয় একজন পুরুষ। যে সকল পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় তাদের মধ্যে
মানসিক চাপ কাজ করে থাকে।[iv]
মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু করণীয়ঃ
শরীরের
অন্যান্য রোগের মতন মানসিকভাবে অসুস্থবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনজনের সাথে খোলামেলা কথা বলা, তাদেরকে বলতে অপারগ হলে
ডাক্তারের আশ্রয় নেয়া খুবই প্রয়োজন। পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে একে অপরের মানসিক
স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। শুধু পরিবার নয়, বধু-বান্ধবদেরও একে অপরের
খোঁজ-খবর রাখা, বিপদে-আপদে এগিয়ে আসার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মানসিক
সমস্যার ফলে একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এবং অনেক সময় বেছে নেয়
মৃত্যুর পথ। এজন্য আপনজন ছাড়াও স্কুল,
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে একজন মনোবিশেষজ্ঞ
নিয়োগের মাধ্যমে। তাছাড়া সামাজিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যে ধ্যান-ধারণা রয়েছে
তা ভেঙে ফেলতে হবে। মিডিয়া, বই-পুস্তকের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উপকারিতা নিয়ে
প্রচার চালাতে হবে। আবেগের ব্যাপারে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের আবেগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি
নিজেকে ভালবাসতে হবে এবং এমন কিছু করতে হবে যা আপনাকে প্রাণবন্ত রাখবে। যে কোনো ধরণের মনোমালিন্য কিংবা মানসিক
চাপ নিয়ে খোলামেলা কথা বলার প্রবণতা তৈরি
করতে হবে। এভাবে সচেতনতা গড়ে তুলার মাধ্যমে ছেলেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে
ট্যাবুগুলো ভাঙ্গা সম্ভব হবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হারও কমে আসবে। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্য কোনো হাসি-ঠাট্টার বিষয় নয়, হোক তা ছেলেদের মামসিক স্বাস্থ্য কিংবা ছেলেদের।
তথ্যসূত্রঃ
[i] Wong,
J.Y., Ho, M.R., Wang, S.Y., & Miller, I.S.K. (2016). Meta-analyses of the
relationship between conformity to masculine norms and mental health-related
outcomes. Journal of Counselling Psychology,
[ii] Mens Mental Health (2017). Key data: mental health. Retrieved from https://www.menshealthforum.org.uk
[iii] Office for National Statistics (2017). Suicides in the UK: 2016 registrations. Available at https://www.ons.gov.uk/
[iv] Wylie, C.,
Platt, S., Brownlie, J., Chandler, A., Connolly, S., Evans, R… Scourfield, J.
(2012). Men, suicide, and society: Why disadvantaged men in mid-life die by
suicide. Samaritans.
please login to review this blog and to leave a comment.
Md. Masudur Rahman Sheikh Rizvee
Finally something written on boys mental health. This is a serious issue as well!