গর্ভধারণের রয়েছে যত বিকল্প এবং তাদের ঘিরে থাকা ভ্রান্ত ধারনা! Banner Photo

Ω author: Sadia Tasmia

 168  1  0

বর্তমানে বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গিয়েছে আর মানুষের জীবনের প্রায় সকল সমস্যারই এনে দিয়েছে সমাধান। এসব সমস্যার মাঝে উল্লেখ্য হচ্ছে, বন্ধ্যাত্ব। এখন আর বন্ধাত্বের একমাত্র সমাধান সন্তান দত্তক নেয়া নয় বরং বৈজ্ঞানিক উপায় অনেক শারীরিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও মা বাবা হতে পারছে অনেক দম্পতি। আজ এমন তিনটি উপায় নিয়েই আলোচনা করব। 


ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন


ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন হল একটি সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি (এআরটি) যা সাধারণত আই ভি এফ হিসাবে পরিচিত। আইভিএফ এ, ডিম্বানু এবং শুক্রাণুর নমুনা সংগ্রহ করে তাকে একটি পরীক্ষাগারের ডিশে ম্যানুয়ালি মিশ্রন করে নিষেক ঘটায়। এর পরে ভ্রূণটি জরায়ুতে স্থানান্তরিত হয়। এআরটির অন্যান্য ফর্মগুলির মধ্যে রয়েছে গেমেট ইন্ট্রাফলোপিয়ান ট্রান্সফার (জিআইএফটি) এবং জাইগোট ইন্ট্রাফলোপিয়ান ট্রান্সফার (জেডআইএফটি)। 

আইভিএফ এবং অন্যান্য সহায়ক প্রজনন কৌশলকে ঘিরে রয়েছে প্রচুর মিথ্যা ধারণা। তন্মধ্যে অনেকগুলি কেবল এই কৌশলগুলি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবের কারণে। এই ভুল ধারণাগুলি দূর করা এই পদ্ধতিগুলির সাথে যুক্ত সামাজিক কলঙ্কও দূর করতে সহায়তা করতে পারে। 

    আইভিএফ সমস্ত বন্ধ্যাত্ব সমস্যা সমাধান করতে পারেঃ বর্তমানে অনেকগুলি সহায়ক প্রজনন পদ্ধতি রয়েছে এবং আইভিএফ এর মধ্যে একটি মাত্র। 

    এটি কেবল ধনী ব্যক্তিদের জন্যঃ আইভিএফ সামান্য ব্যয়বহুল তবে অন্যান্য অনেক সার্জারির তুলনায় সস্তা। এর ব্যয় গত কয়েক বছরে বাড়েনি।

    এটি কেবল কম বয়সী দম্পতির জন্যঃ যদিও বয়স উর্বরতা নির্ধারণের একটি উপাদান, এই পদ্ধতিটি পোষ্ট মেনোপোসাল নারীদের মধ্যেও কম বয়সীদের মতো কার্যকর হতে পারে। 

    আইভিএফের ১০০% সাফল্যের হার রয়েছেঃ আইভিএফ-এর সাফল্যের হার ৩৫ বছরের কম বয়সী দম্পতিগুলিতে প্রায় ৪০%। 

    আইভিএফ বাচ্চাদের ত্রুটিযুক্ত জন্ম হয়ঃ আইভিএফ এ, ত্রুটিযুক্ত বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকি প্রাকৃতিক উপায়ের সমানই। 

    আইভিএফ নিরাপদ নয়ঃ এটি একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া যার মধ্যে প্রায় মাত্র ২% রোগীর ডিম্বাশয়ের হাইপারস্টিমুলেশন সিনড্রোম থেকে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

    আইভিএফ একাধিক গর্ভাবস্থার দিকে পরিচালিত করেঃ যদিও এই পদ্ধতির সাথে একাধিক গর্ভধারণের ঘটনা রয়েছে তবে স্থানান্তরিত ভ্রূণের সংখ্যা হ্রাস করা, বিশেষত অল্প বয়সী মহিলাদের মধ্যে এই ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

    আইভিএফ এর জন্য একজন ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজনঃ ডিম্বানু সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলাকালীন হাসপাতালে ভর্তি কেবল কয়েক ঘন্টা থাকে। ব্যক্তিকে অনেক দিনের জন্য ভর্তি করতে হয় না।

    ডিম্বানু দান করলে তা হ্রাস পাবেঃ মাসিক চলাকালীন সময়, একটি মেয়ের ৪০০,০০০ এরও বেশি ডিম্বানু থাকে। এর মধ্যে পুরো জীবনকালে মাত্র ৪০০টি প্রয়োজন। প্রতি মাসে এগুলির প্রায় ২০ টি একত্রিত হয় এবং ডিম্বস্ফোটন চলাকালীন মাত্র এক বা দু'টি মুক্তি পায় বাকি ১৮ থেকে ১৯ টি মারা যায়। আইভিএফ এই অবশিষ্ট ডিমের বৃদ্ধি বজায় রাখতে সহায়তা করে। সুতরাং, আইভিএফ-এর অনুদানের মাধ্যমে ডিম শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

    আইভিএফ গর্ভাবস্থার ফলে সিজারিয়ান জন্ম হয়ঃ আইভিএফ গর্ভাবস্থা ঠিক প্রাকৃতিকভাবে গর্ভাবস্থার মতো। আইভিএফ অনুসরণ করে প্রাকৃতিকভাবে প্রসব সম্ভব।


সারোগেসি


গর্ভধারণের বিকল্প হিসেবে একজন সারোগেট মাকে ব্যবহার করার বিষয়ে এখনও কিছু বিতর্ক রয়েছে। এর আইনী প্রক্রিয়াটিও জটিল কারণ এটি একেক রাষ্ট্রে একেক রকম। তবুও, বন্ধ্যাত্ব বা অন্য কারণে, সারোগেসি একটি উল্লেখযোগ্য বিকল্প হিসেবে ধরা হয়। 

সারোগেট মা কী?

দু ধরণের সারোগেট মা রয়েছেঃ

ট্রেডিশনাল সারোগেটঃ এ পদ্ধতিতে সারোগেট মা সন্তানের বাবার শুক্রাণু দিয়ে কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণ করে। এধরণের সারোগেট মা হল শিশুর জৈবিক মা কারণ এক্ষেত্রে এই মায়ের ডিম্বানু সন্তানের বাবার শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। সন্তানের বাবার শুক্রাণুর বদলে শুক্রাণু দাতার শুক্রাণুও ব্যবহার করা যেতে পারে।

গর্ভকালীন সারোগেটঃ "ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন" (আইভিএফ) এর মাধ্যমে এখন সন্তানের মায়ের কাছ থেকে ডিম্বানু সংগ্রহ করে, পিতার কাছ থেকে শুক্রাণু দিয়ে তাদের নিষিক্ত করে সেই ভ্রূণকে একজন গর্ভকালীন সারোগেটে মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সন্তানের সাথে তার কোনও জিনগত সম্পর্ক নেই কারণ নিষিক্ত ডিম্বানু ছিল না। গর্ভকালীন সারোগেটকে "বার্থ মম" বলা হয় আর জৈবিক মা সেই নারীই, যার ডিম্বানু নিষিক্ত ছিল।

সারোগেসিকে ঘিরে অনেকগুলি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, তবে প্রত্যেকটি ধারণার গঠনমূলক ব্যখ্যাও রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য ধারনা হচ্ছেঃ

    সারোগেসি কেবল ধনী বা সেলিব্রিটিদের জন্যঃ এই ধারণার কারণ হচ্ছে এই পদ্ধতিতে হাসপাতালের চক্কর কাটতে কাটতেই অনেক পয়স খরচ হয়ে যায়। কিন্তু সারোগেট মায়ের যদি এমন কোনো স্বাস্থ্য বীমা থাকে যা যে কোনো ধরণের মেডিকেলের খরচকে কাভার করে, তবে খুব কম খরচেই সারোগেসি সম্ভব।

    একজন মহিলা তার সৌন্দর্য বাঁচাতে বা গর্ভাবস্থা এড়ানোর জন্য সারোগেসি বেছে নেয়ঃ সারোগেসি হল এক নারীর অন্য নারীকে মাতৃত্ব উপভোগ করতে সহায়তা করা, যার মায়ের শারীরিক চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। একটা নারী কি পরিমাণ অসহায়ত্ব বোধ করলে সারোগেসির সহায়তা নেয়, তা শুধু ভুক্তভোগীই জানে। 

    সারোগেট মা সন্তানের কাস্টডি নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেঃ যদিও সারোগেট মা গর্ভাবস্থায় সন্তানের লালন পালন করে, কিন্তু সারোগেট না শুরু থেকেই সচেতন থাকেন যে তিনি সন্তানের কাস্টডি নেওয়ার অধিকার রাখে না।

    সন্তানের সাথে বন্ধন আবদ্ধ হতে সমস্যা হবেঃ বন্ধনের প্রক্রিয়াটি গর্ভের সময় নয়, সন্তানের জন্মের পরে শুরু হয়। এখানে সন্তানের জন্মের পরে তাকে তাত্ক্ষণিকভাবে পিতামাতার হাতে সোপর্দ করা হয় যেখানে সেই বন্ধন তৈরি হতে শুরু হয়। 


টেস্ট টিউব


একটি টেস্ট-টিউব বাচ্চা একটি পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে যৌনমিলনের বাইরেও থেকে থাকা পদ্ধতিগুলির ফলস্বরূপ একটি সফল মানব প্রজনন থেকে সৃষ্ট পরিবর্তে মেডিক্যাল হস্তক্ষেপে সফলভাবে নিষেকের জন্য ডিম এবং শুক্রাণু কোষ উভয়কেই ব্যবহার করে। এই শব্দটি প্রথমে কৃত্রিম গর্ভধারণের প্রাথমিক প্রয়োগগুলি থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের বোঝাতে ব্যবহৃত হলেও এখন ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ব্যবহারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের বোঝাতেও এর প্রয়োগ হয়। 

টেস্ট টিউবকে ঘিরে উল্লেখ্য ভ্রান্ত ধারণাগুলো হচ্ছে, 

    শীঘ্রই আসছে কাস্টমাইজড সন্তানঃ জেনেটিক নির্বাচন বা প্রাক-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক ডায়াগনোসিস (পিজিডি) কোনও ক্যাটালগের মাধ্যমে পছন্দসই জিন বেছে নেওয়ার মতো নয়। পৃথকভাবে জিন নয়  বরং ভ্রূণকে পছন্দ করা হয়। 

    ডিম্বানু অনুদান খুব সাধারণ ব্যপারঃ টেস্ট টিউবে আগ্রহী দম্পতিদের ধারনা হয় যে টাকার বিনিময় সহজেই ডিম্বানু পাওয়া যায় যা ভুল কারণ ডিম্বানু অনুদানের সময় অনুদানকারীরও শারীরিক ঝুঁকি থাকে যার কারণে সহজে কেউ তা করতে চায় না। 

    আইভিএফ উর্বরতা বাড়ায়ঃ এমনটা তো নয়ই বরং, আইভিএফ এর মধ্য দিয়ে যাওয়া মহিলাকে প্রথমেই  তার উর্বরতা চক্র বন্ধ করতে হরমোন গ্রহণ করতে হয়। 

    টেস্ট টিউবের সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধি হয়ঃ টেস্ট টিউবের সন্তান কেমন হবে তা সম্পূর্নভাবে নির্ভর করে তার শুক্রানু ও ডিম্বানু দাতার উপর, যেমনটা হয় বাচ্চা দত্তক নেবার সময়। 



Share On Facebook

please login to review this blog and to leave a comment.


More From Hia

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

published on: 01 Jun, 2021

প্রথমবারের মত ...

 33351    4    0 
ডেঙ্গুঃ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধ!

published on: 21 Jul, 2019

এই বর্ষায় বৃষ্টির সাথেখিচুড়ি তাে উপভােগ করবেনই, তবে আপনারা যাতে সুস্থতার সাথেতা করতে পারেন তাইগুরুত্বপূর্ণ এক...

 9031    2    0 
এবারের ডেঙ্গু কেনো অন্যবারের চেয়ে আলাদা?

published on: 22 Jul, 2019

এবারের ডেঙ্গু কেনো আলাদা?: এবারের ডেঙ্গু জ্বরের সাথে আগের মিল নেই। নতুন কোন শক্তিশালী ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ছড়ানো এই অসুখ এবার ঢাকায় রীতিমতো মহামারি ...

 8694    2    0 

More From Health & Lifestyle

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

author: Sadia Tasmia

প্রথমবারের মত ...

 33351    4    0 
আপনি কী শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত?

author: Hasnat Zahan Shapla

অনেক সময়ই আপনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর আবারও গিয়ে চেক  করে আসেন যে আসলেই ব...

 6627    2    0 
কোন সমস্যার জন্য রয়েছে কোন ডাক্তার? | পর্ব ২

author: Sadia Tasmia

প্রথমবারের মত কোনো রোগের

 6403    3    0