
নারীদের অদ্ভুত এক ক্ষমতা আছে বলে
আমরা সবাই জানি, তা হলো একজন নারী গর্ভবতী হলে সে নিজেই সবার আগে অনুমান করতে
পারে। এমনকি অপর নারীও অন্য নারীকে দেখেই বুঝে ফেলতে পারে কেউ গর্ভবতী হলে। কিন্তু
মানুষের দেহ এমনি এক জটিল এক জিনিশ যা সকল নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অনেক অদ্ভুত
পরিস্থিতির স্বীকার করতে পারে। ফ্যানটম প্রেগনেন্সি এমনই এক জটিল
অবস্থা যখন একজন নারীর ( এমনকি পুরুষের ক্ষেত্রেও) দেহে গর্ভবতী হওয়ার প্রায় সব রকমের
লক্ষণ দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে আসলে সে গর্ভবতী হয়নি। এই রকম পরিস্থিতি প্রায় সময়েই
হয়ে থাকে, ব্যাপারটি এমনও নয়। প্রতি ২২০০ শিশু
জন্মের মধ্যে ১-৬টি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে অনেকে।
ফ্যান্টম প্রেগনেন্সির কারণসমূহঃ
ফ্যান্টম
প্রেগনেন্সির প্রধান কারণ সম্পর্কে জানা যায়নি এখনো। তবে ধারণা করা হয় এর পেছনে
কাজ করে মানুষের মনস্তত্ত্ব। মানুষের মস্তিষ্ক অত্যন্ত রহস্যজনক এবং অঅনুমেয় এক
অঙ্গ। মানুষের মস্তিষ্ক মানুষকে একদম ভিন্ন দিকে পরিচালিত করতে পারে। ধারণা করা
হচ্ছে যেসকল নারীর গর্ভবতী হওয়ার তীব্র বাসনা থাকে তাদের মস্তিষ্ক তাদের হরমোনে
এমন পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে যা একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে দেখা যায়। আবার বলা
হয়ে থাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারনে অনেকে এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারে। তাছাড়া
বারংবার গর্ভপাত হলেও একজন নারীর অবচেতন মনে তীব্র সন্তান লাভের বাসনা জাগে যা
ফ্যান্টম প্রেগনেন্সির হতে ত্বরান্বিত করে। কেউ কেউ অবশ্য তাদের যুক্তিতে বলেছেন
ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি একটি শারীরিক প্রক্রিয়ার ফলাফল যেমন, জরায়ুতে টিউমার এর
কারনে অনেক সময় ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি হতে পারে। আবার অনেকে বলেছেন এটি রাসায়নিক
উপাদানগুলোর অসামঞ্জস্যতার জন্য হয়ে থাকে। গবেষকরা ফ্যান্টম প্রেগনেন্সির মূল কারণ বের
করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এখনো।
লক্ষণসমূহ এবং চিহ্নিতকরণঃ
ফ্যান্টম প্রেগনেন্সির লক্ষণগুলো
সাধারণ গর্ভধারনের লক্ষণ সমূহগুলোই। তবুও এগুলো আরেকবার জেনে নেই। যেমন,
·
বমি বমি ভাব
·
মাসিক রজঃচক্র বন্ধ
হয়ে যাওয়া
·
ওজন বৃদ্ধি
·
ঘন ঘন মূত্রত্যাগ
·
স্তন ফুলে যেতে
পারে
·
পেট ফাঁপা অনুভব
করা
·
খাবারের রুচি
পরিবর্তন
এরকম অন্যান্য যেসকল লক্ষণ রয়েছে তা ফ্যান্টম প্রেগনেন্সিতেও দেখা যায়। যা একজন নারীকে ভাবিয়ে তুলে সে গর্ভবতী। ফ্যান্টম প্রেগনেন্সি হয়েছে কি না তা চিকিৎসকের কাছে গেলেই জানা যাবে স্পষ্টভাবে। এবডমিনাল আল্ট্রাসাউন্ড, পেল্ভিক এক্সাম, ইউরিএনালাইসিস ইত্যাদি পরীক্ষা করে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় একজন নারী গর্ভ ধারণ করেছে কি না। তাই এসকল গর্ভ ধারনের লক্ষণ দেখা দিলে নিজে থেকে অনুমান না করে প্রথমে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
যা করা প্রয়োজনঃ
যদি পরীক্ষায় দেখা যায় যে টিউমার
রয়েছে তাহলে দ্রুত টিউমার অপসারণ করতে হবে। যদি টিউমার না হয়ে থাকে তাহলে তার
মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। সাইকোলজিকাল থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
একজন নারী প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যেতে পারে যখন সে জানতে পারবে সে আসলে
গর্ভবতী না। তীব্র বাসনার পাশাপাশি তাঁর তীব্র অনুরাগও হবে। সেক্ষেত্রে তাঁর
মানসিক সমস্যা হতে পারে। এজন্যে পরিবারের
সকলকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন মনস্তত্ত্ববিদ কিংবা মনোবিদের
কাছে শরণাপন্ন হতে হবে।
যেসকল নারীর পূর্বে গর্ভপাত হয়েছে
তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। যদি তখন থেকেই মনঃচিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়
তাহলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আগাম
ব্যবস্থা নেয়া যাবে। মানসিক মনোবল বাড়ানোর জন্য এবং সন্তান নেয়ার জন্য পারিবারিক
চাপ দেয়া যাবে না। পারিবারিক এবং সামাজিক চাপেই অনেক নারীর মনে তীব্র বাসনা জাগে
সন্তান লাভের জন্য।
তথ্যসূত্রঃ
২। http://www.bounty.com/pregnancy-and-birth/miscarriage-and-loss/phantom-pregnancy
৩। https://www.whattoexpect.com/pregnancy/your-health/phantom-pregnancy/
৪। https://americanpregnancy.org/getting-pregnant/pseudocyesis-false-pregnancy/