ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড নিয়ে ছেলেদের এখনো কি দ্বিধা? Banner Photo

Ω author: Shakhawat Hossain Akash

 267  0  0

ঋতুস্রাব অন্যান্য স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস, রেচন ইত্যাদির মতই একটি খুবই সাধারন প্রক্রিয়া।হাজার হাজার বছর ধরে এই প্রক্রিয়ার বদৌলতে মানুষের জন্ম হচ্ছে।কিন্তু ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজে কাজ করে ট্যাবু। মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় ঋতুস্রাব নিয়ে সংকোচবোধ। সাধারন এই শারীরিক প্রক্রিয়া নিয়ে কেন এভাবে ট্যাবু কাজ করে তাঁর পেছনে রয়েছে নানা রকম সামাজিক, ধর্মীয় কারন। এই ব্লগে গতানুগতিক ব্লগের মতো সরাসরি তথ্য দেয়া থাকবেনা।ব্লগটি লেখার জন্য কয়েকজন ছেলের মতামত নেয়া হয়েছে। ঋতুস্রাব সম্পর্কে বর্তমানের তরুনরা কীভাবে ভাবছে এবংঋতুস্রাবকে কীভাবে দেখছে  সে তার একটি খোলামেলা ধরনের আলাপ থাকবে এই ব্লগে। খোলামেলা আলাপের মাধ্যমে আমরা দেখার চেষ্টা করবো ভবিষ্যত প্রজন্মে ট্যাবুগুলো ভাঙ্গা সম্ভবপর হয় কি না।

শুরুতে আমার আশেপাশের কিছু বন্ধুদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে মতামত কীরকম এই ব্যাপারে সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহান সাকিব এর মতে, ঋতুস্রাব একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, এর মধ্যে লুকানোর কিছু নেই। স্কুলে থাকার সময় অনেক ছেলেদের মাঝে এটি কৌতুকপূর্ণ ব্যাপার ছিলো। কারন হিসেবে ফারহান মনে করেন স্কুল থেকে যথাযথ শিক্ষা প্রদান না করা কিংবা ঋতুস্রাব বিষয়টি এড়িয়ে চলা। তাছাড়া পরিবারও সহায়ক ভুমিকা পালন করেনি। ফারহান The Conversation নামক একটি অনলাইন জার্নাল পড়ার সময় লক্ষ্য করেছেন যুক্তরাজ্যতেও স্কুল বাচ্চাদের মধ্যে ১৫% ঋতুস্রাব সম্পর্কে কোনো ধারণা লাভ করতে পারে না। তাছাড়া প্লান ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এর হিসেব মতে মেয়েদের প্রায় অর্ধেক ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সী মেয়েরা ঋতুস্রাব নিয়ে লজ্জা বা সংকোচবোধ করে। ফারহান সমাজে কিছু ট্যাবু লক্ষ্য করেন যেমন, স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির সময় বাড়তি কাগজের মোড়কে বিক্রি করতে দেখা যায় যা অত্যন্ত আদিখ্যেতা বলে তিনি মনে করেন। তবে তরুণসমাজের মধ্যে এখন সচেতনতা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডায় এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই ঋতুস্রাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। ফারহান মনে করছেন,  ঋতুস্রাব নিয়ে ট্যাবু ভাঙ্গা শুরু হয়েছে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) এর শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন ঋতুস্রাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে  স্বীকার করেন যে বাংলাদেশে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটিকে এখনো ট্যাবু হিসেবে ধরা হয়ে থাকে অনেক জায়গায়। তিনি মনে করেন ঋতুস্রাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন যার মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটিও নিশ্চিত হবে। অনেক সময় লজ্জাবশত ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করতে চায় না তখন মেয়েরা নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে পারে। তাছাড়া আশেপাশের মানুষের অসহযোগিতা একজন নারীর মানসিক চাপের কারন হতে পারে। নাঈম বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানীর সাথে কাজ করেছেন এবং সেখানকার মানুষদের মধ্যে তিনি ঋতুস্রাব বিষয়ে বেশ উদার মনোভাব লক্ষ্য করেছেন। তাছাড়া বন্ধুদের আড্ডায় এই বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কন্সাল্টেন্টস লিমিটেড এর ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়ার জালাল নিলয় সদ্য বুয়েট থেকে পাশ করে চাকরী জীবনে প্রবেশ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করে শরীরের অন্যান্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতো ঋতুস্রাব অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। বুয়েটে থাকাকালীন তিনি দেখেছেন তাঁর বন্ধুরা ঋতুস্রাব বিষয়ে সচেতন ছিলো এবং মেয়ে বন্ধুদের সাথেও এই ব্যাপারে খোলামেলা আলাপচারিতা হতো। কিন্তু তাঁর শৈশবে তিনি দেখেছেন তাঁর বয়সীছেলেরা এই নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো। সে হিসেবে গত ১০-১২ বছরের তুলনায় বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি মনে করেন পরিবার থেকেই ঋতুস্রাব সম্পর্কিত সামাজিক ট্যাবুগুলোর ভাঙ্গন দরকার। তাঁর পরিবার তাকে উদার মানসিকতা অর্জন করতে সাহায্য করেছে। শৈশবে ঋতুস্রাব সম্পর্কে মেয়েদের যেমন শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে তেমনি ছেলেদের এই বিষয়ে জানা দরকার বলে তিনি মনে করেন। কেননা একজন নারী সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার জন্য ছেলেদের মাঝে ঋতুস্রাব সহ অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তিনজন আলোচকের সাথে কথা বলে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত, শৈশবে আমাদের পরিবার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথভাবে শিক্ষা দেয়া হয় না। ঋতুস্রাব সম্পর্কিত ট্যাবু ভাঙ্গতে হলে পরিবার থেকে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, সমাজে এখনো ট্যাবু কাজ করলেও তরুনদের মাঝে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বর্তমান তরুণ সমাজ ভবিষ্যতে বাবা হিসেবে তাদের সন্তানদের প্রতি সহনশীল এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাঁর মেয়ে সন্তানের প্রতি সে যত্নশীল হবেন এবং সন্তানের জন্য মানসিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। চতুর্থত, ঋতুস্রাব সম্পর্কে ট্যাবু ভাঙ্গতে হলে খোলামেলা আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজন।

ঋতুস্রাব নিয়ে সামাজিক ট্যাবু নারীদের জীবনকে অনেক অনিশ্চয়তা এবং মানসিক চাপের মধ্যে নিয়ে যায়। ঋতুস্রাবের দোহাই দিয়ে নারীকে ‘দুর্বল’ কখনো ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছে যার কারনে নারীরা এতোদিন অবহেলিত। তবে তরুণ সমাজের মধ্যে এই আলাপচারিতা থেকে আমরা লক্ষ্য করছি পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বর্তমান তরুণদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে নারীরা নিজেদের যথাযথ সম্মান ও সাহায্য পাবে তাদের পিতা এবং ভাই থেকে। পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ঋতুস্রাব বিষয়ে আরো সচেতনতা গড়েতুলা সম্ভব। নারীদের প্রতি এতোদিনের অবহেলার অবসান ঘটবে বর্তমান তরুণ সমাজের হাত ধরে সে আশা করা যেতেই পারে।

Share On Facebook

please login to review this blog and to leave a comment.


More From Hia

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

published on: 01 Jun, 2021

প্রথমবারের মত ...

 32991    4    0 
ডেঙ্গুঃ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধ!

published on: 21 Jul, 2019

এই বর্ষায় বৃষ্টির সাথেখিচুড়ি তাে উপভােগ করবেনই, তবে আপনারা যাতে সুস্থতার সাথেতা করতে পারেন তাইগুরুত্বপূর্ণ এক...

 9000    2    0 
এবারের ডেঙ্গু কেনো অন্যবারের চেয়ে আলাদা?

published on: 22 Jul, 2019

এবারের ডেঙ্গু কেনো আলাদা?: এবারের ডেঙ্গু জ্বরের সাথে আগের মিল নেই। নতুন কোন শক্তিশালী ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ছড়ানো এই অসুখ এবার ঢাকায় রীতিমতো মহামারি ...

 8661    2    0 

More From Health & Lifestyle

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

author: Sadia Tasmia

প্রথমবারের মত ...

 32991    4    0 
আপনি কী শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত?

author: Hasnat Zahan Shapla

অনেক সময়ই আপনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর আবারও গিয়ে চেক  করে আসেন যে আসলেই ব...

 6581    1    0 
কোন সমস্যার জন্য রয়েছে কোন ডাক্তার? | পর্ব ২

author: Sadia Tasmia

প্রথমবারের মত কোনো রোগের

 6387    3    0