
আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে হৃদপিণ্ড এবং কিডনি অন্যতম। একদিকে হৃদপিণ্ড যখন সারা শরীরের অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালনের কাজ করে , অন্যদিকে কিডনি রক্তের ফিল্টার করে ও বর্জ্যগুলো বের করে দেয় শরীর থেকে রেচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সাম্প্রতিককালের গবেষণাগুলোতে দেখা গিয়েছে যে হৃদরোগের সাথে কিডনির রোগের যোগাযোগ রয়েছে। দেখা যায় হৃদপিন্ডের সমস্যা হলে কিডনিতেও সমস্যা হয়। এমনকি দেখা গিয়েছে যে হৃদরোগের জন্য যেসকল ওষুধ আছে তা অনেক সময় নিয়ম অনুযায়ী না গ্রহন করার জন্য কিডনির ক্ষতির কারন হিসেবে দাড়াতে পারে। চলুন দেখে নেই হৃদরোগের ওষুধগুলো কীভাবে আমাদের কিডনিতে ক্ষতি করতে পারে এবং এর থেকে বাঁচার কিছু উপায়।
হৃদরোগের ওষুধ যখন ক্ষতির কারনঃ
হৃদরোগের জন্য ডিউরেটিক্স, এসপিরিন, বেটা ব্লকারস, এল্ডেস্টেরন ব্লকার এগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় রোগীর অসাবধানে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ গ্রহণ করার ফলে কিডনির ক্ষতি সাধন হয়।
বেটা ব্লকারসঃ
বেটা ব্লকারস হৃদপিণ্ডে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমিয়ে আনার কাজ করে। কিডনির বেটা রিসিপ্টরকে বন্ধ করে দেয় এবং কিডনির মধ্যকার রক্ত চলাচল ও ছাকন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে যা হৃদপিণ্ডের রক্তচাপ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে বেশি ওষুধ গ্রহণ করলে কিডনিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
এসপিরিনঃ
যাদের স্বাভাবিক কিডনি আছে তাদের জন্য এসপিরিন ব্যবহার তেমন প্রভাব ফেলে না। তবে প্রতিদিন যদি ৬-৮টি ট্যাবলেটের ডোজ নেয়া হয় অথবা ১০ দিনের বেশি খাওয়া হয়, তাহলে কিডনিতে সাময়িক অথবা স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এক সপ্তাহের বেশি এসপিরিন গ্রহনের ফলে ইউরিক এসিড এবং রেচন প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যাদের এমনিতে কিডনি পুরোপুরি সুস্থ নয় তারা এসপিরিন ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
এল্ডস্টেরন ব্লকারসঃ
হার্ট এট্যাকের জন্য আরো একটি ওষুধ হচ্ছে এল্ডেস্টেরন ব্লকারস। এগুলো হৃদপিন্ডের চিকিৎসার জন্য উপকারী তবে হরমনে ব্যাপক সাড়া ফেলে এই ওষুধগুলো। তাই ডোজ অনুযায়ী না খেলে অনেক সময় কিডনিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। স্পিরোনোল্যাক্টন (Spironolactone) ও এপ্লারেনন ( eplerenone) জাতীয় ওষুধগুলো কিডনির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটায় সাথে কিডনিতে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম সৃষ্টি হয়। যাদের কিডনিতে আগেই সমস্যা ছিল তাদের জন্য এল্ডস্টেরন ব্লকারস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ডিউরেটিক্সঃ
হাইড্রক্লোরোথাইয়াজাইড ( hyrdrochlorothiazide) এবং ফুরোসেমাইড ( furosemide) জাতীয় ওয়াটার পিল উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলো অনেক সময় কিডনির প্রদাহ এবং পানিশূন্যতার কারন হতে পারে। ব্যক্তিভেদে উপসর্গগুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কারো ইউরিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে, পা ফুলে যেতে পারে, বুকে চাপ বা ব্যাথা হতে পারে।
কিডনির সুরক্ষার জন্য করণীয়ঃ
- প্রথমত খেয়াল রাখতে হবে হৃদপিণ্ড জনিত কোনো ওষুধ খাওয়া মানে কিডনিতেও এর প্রভাব পড়বে। এই দুইটি অঙ্গ একে অপরের উপর অনেক নির্ভরশীল। তাই যাদের পূর্বে কিডনির কোনো সমস্যা আছে তারা নিজে থেকে কখনো হৃদরোগের ওষুধ সেবন করবেন না। এ ক্ষেত্রে যে কোনো খামখেয়ালিপনা মারাত্মক ঝুঁকির হতে পারে।
- হৃদরোগের ওষুধগুলো যত কম ডোজের নেয়া সম্ভব সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে বিরূপ প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। কখনো নিজে থেকে ডোজের পরিমাণ বাড়াবেন বা কমাবেন না।
- এক সপ্তাহের বেশি হৃদরোগের ওষুধ সেবন করলে ইউরিক এসিড টেস্ট, ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রার তারতম্য ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যারা হৃদরোগের ওষুধ সেবন করেন তাদের জন্য এই কাজটি করা জরুরী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৩০% কিডনির রোগ পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণের অভাবে হয়েছে। তাই হৃদরোগীদের ওষুধ খাওয়ার মাঝে তাদের কিডনির পরীক্ষা করা জরুরী
- বুকের ব্যথানাশক ওষুধ যেমন, এসপিরিন ১০ দিনের বেশি সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- এসকল ওষুধ সেবনের সময় পানি বা তরল জাতীয় খাবার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে এবং এলকোহল পরিহার করতে হবে।
- ব্যায়ামের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সচল এবং সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে। ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে জীবনযাপন করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
হৃদরোগের চিকিৎসা করার সময় কখনো মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ঝুঁকি নিবেন না। সবসময় মনে রাখতে হবে চিকিৎসকরা বুঝেশুনে ডোজ দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে নিজে থেকে কখনো ডোজ ঠিক করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার চেষ্টা করবেন। ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করতে হবে সবসময়। ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা একটির উপকার করতে যেয়ে অন্য আরেকটি অঙ্গের ক্ষতির কারন যেন না দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্যপুঞ্জিঃ ১। https://www.kidney.org/atoz/content/painmeds_analgesics ২। https://medshadow.org/6-medications-can-harm-the-kidneys/ ৩। https://abcnews.go.com/Health/HeartFailureTreatment/story?id=5229653 ৪। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/6122552