ঘাম শরীরের তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণের একটি প্রাকৃতিক উপায়; এটি হওয়া স্বাস্থ্যকর ও স্বাভাবিক। কারণ এটি
শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য থেকে মুক্তি পেতে এবং দেহের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা
করে। তবে এটি দুর্গন্ধ ছড়ায় বলে আবার উদ্বেগের কারণও হয়ে ওঠে। প্রতিটি ব্যক্তির একটি
নিজস্ব গন্ধ থাকে, যা বয়স, খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য এবং লিঙ্গের মতো কিছু বিষয় দ্বারা
প্রভাবিত হয়। তাই অনেক সময় নিজের ঘামের দুর্গন্ধ নিজে বুঝতে না পারলেও আশেপাশের মানুষ
বিপাকে পরে যান। আবার খুব বেশি দুর্গন্ধ নিজের ব্যক্তিত্বের জন্যও অস্বস্তিদায়ক। এর
কারণে ব্যাহত হতে পারে স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্ক গুলোও। ডিওডোরেন্টস হলো দেহের গন্ধ
দূর করার অন্যতম সহজ উপায়। তবে ডিওডোরান্টে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এবং
মানবদেহে তাদের প্রভাবকে ঘিরে রয়েছে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক। অতএব, অনেকেই সমস্যাটি মোকাবেলায় সবচেয়ে নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক বিকল্প উপাদানের সন্ধান করে
থাকেন। তাই ঘামের গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারে এমন প্রাকৃতিক অথচ ঘরোয়া
কিছু টোটকা সম্পর্কে জানতে পড়ুন আজকের এই
লেখাটি।
প্রথমেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়টিতে নজর দিন। আপনি কী খাচ্ছেন? যদি বেশি
মাংস আর প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকে তবে আজই আপনার ডায়েট পরিবর্তন করুন। কখনও কখনও অধিক তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার, বা গন্ধযুক্ত খাবার যেমন রসুন এবং পেঁয়াজ আপনার
শরীরে ঘামের গন্ধ বৃদ্ধি করতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভর করা এবং পর্যাপ্ত
পরিমাণে তাজা শাকসব্জী এবং ফল না খাওয়া শরীরের দুর্গন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ
এই আশযুক্ত শাকসবজির মধ্যেই প্রাকৃতিক ডিটক্সাইফাইং প্রভাব বিদ্যমান।
এছাড়া নিয়মিত গোসল করুন
এবং আপনার পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিয়মিত আপনার আন্ডারআর্ম(বগল) শেভ করে পরিষ্কার
রাখতে হবে। এছাড়াও আন্ডারআর্ম শুকনো রাখুন। শরীরের শুষ্ক অঞ্চলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারেনা।
এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো ও বংশবিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে এবং ঘাম ও ঘামের গন্ধ
কমাবে। নিশ্চিত করুন যে, আপনি আসলেই পরিমিত পানি পান করছেন কিনা। আমি নিশ্চিত যে আপনি এই পরামর্শটি ইতোমধ্যেই অনেকবার
শুনেছেন। তবুও আমি আবার মনে করিয়ে দিলাম। পর্যাপ্ত পানি পানে ঘামের গন্ধ কমাতে আসলেই
সহায়তা করে।
এ তো গেল আপনার জীবন
ধারণ পদ্ধতি। এবারে আসুন জেনে নিন ঘামের গন্ধ দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়। প্রতিটি উপাদানই
আপনার রান্নাঘরে সাধারণত সবসময়ই থাকে।
● ভিনেগার:
আপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহারে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়। একটি ছোট বাটিতে আপেল সাইডার
ভিনেগার নিয়ে একটি তুলোর বল এতে ডুবিয়ে নিন এবং এটি আপনার আন্ডারআর্মে এবং ঘামের
ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এমন অঞ্চলগুলিতে প্রয়োগ করুন। আপনাকে অবশ্যই এটি প্রতিদিন দুবার
করতে হবে - প্রতিদিন সকালে গোসলের পরে এবং
প্রতিবার রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে। আপেল সাইডার ভিনেগারের অম্লীয় প্রকৃতি এবং এর
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (জীবাণুপ্রতিরোধক) বৈশিষ্ট্য ত্বকের পিএইচ এর ভারসাম্য রক্ষা
করতে সহায়তা করে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে এমন ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। আপেল সাইডার
ভিনেগার নিয়মিত ব্যবহার ব্যাকটেরিয়া পরবর্তীকালে জন্মানো রোধ করতে সহায়তা করে।
এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল যে, সাদা এবং আপেল সাইডার উভয় ভিনেগারই ভালো কাজ করে।
● লেবু:
ভিনেগারের মতো লেবুও ত্বকের পিএইচ এর ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে।
অর্ধেক করে কাটা লেবু নিন এবং এটি আপনার আন্ডারআর্ম অঞ্চলে প্রয়োগ করুন এবং
একটু চেপে চেপে ধরুন যাতে লেবুর রস সরাসরি
ত্বকে লাগে । একটি পেস্ট তৈরি করতে পারেন
দুই টেবিল চামচ কর্নস্টার্চ এবং লেবুর রস যোগ করে। এটি আপনার আন্ডারআর্মে লাগান এবং দশ মিনিট পরে
পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন।
● বেকিং সোডা
ও লেবুর মিশ্রণ: বেকিং সোডা এক টেবিল চামচ এবং লেবুর রস
এক টেবিল চামচ মিশিয়ে নিন। এটি আপনার আন্ডারআর্মে সরাসরি প্রয়োগ করুন এবং এটি প্রায়
দুই থেকে তিন মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর
গোসল করে নিন। এটি কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন একবার করে করুন। বেকিং সোডা আপনার আন্ডারআর্ম
শুষ্ক এবং ঘাম মুক্ত রাখে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল
বৈশিষ্ট্য দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে। লেবুর অম্লতা আপনার
ত্বকের পিএইচ হ্রাস করে, দুর্গন্ধজনিত ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি
করে।
● গ্রিন টি:
একটি পাত্রে পানি নিয়ে ফুটান এবং তারপর এতে কিছু সবুজ চা পাতা(গ্রিন টি এর ব্যাগ ব্যবহার
করতে পারেন ) ছেড়ে দিন । এবার এটি ঠান্ডা হয়ে গেলে, একটি তুলার বল ডুবিয়ে রাখুন
এবং আপনার ঘাম প্রবণ ত্বকে প্রয়োগ করুন।
চা ত্বককে শুকনো ও গন্ধ মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে। তবে সপ্তাহে মাত্র ২-৩ বার
এই টিপসটি ব্যবহার করুন।
● টমেটো:
আপনার সমস্যা যদি অত্যন্ত বেয়ারা হয় এবং উপরের কোনো পদ্ধতিতেই কাজ না হয় তবে এবারের
টিপসটি আপনার জন্যই। টমেটোর রস ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দেয়। টমেটোর অম্লতা দুর্গন্ধজনিত
ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং ত্বকের পোরস বা সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো সঙ্কুচিত করতে পারে।
ফলে আপনার যদি অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার মতো সমস্যা থাকে তা দূর হয়। দুই কাপ তাজা টমেটো
রস করে ছেঁকে নিন এবং আপনার গোসলের পানির সাথে (এক বালতি পানিই যথেষ্ট ) মিশিয়ে নিন।
টমেটোতে গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড থাকে যা প্রাকৃতিক কীটনাশক। এই গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড আপনার ত্বকের ব্যাকটেরিয়া
এবং ভাইরাসকে মেরে ফেলে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে।
তথ্যসূত্র:
● HARVEY,
O. (2017, April 14). 8 natural ways to reduce your body odor, even when you’re
sweating from head to toe. Retrieved from HelloGiggles: https://hellogiggles.com/lifestyle/health-fitness/natural-ways-reduce-body-odor-sweating-head-toe/
● BB,
T. (2018, July 26). FIGHT BODY ODOUR WITH THESE HOME REMEDIES . Retrieved from
BEBEAUTIFUL:https://www.bebeautiful.in/lifestyle/health-and-wellness/fight-body-odour-with-these-home-remedies/
● Boldt,
A. (2018, December 18). 4 Diet Choices to Eliminate Body Odor . Retrieved from
livestrong:https://www.livestrong.com/article/155243-foods-to-eliminate-body-odor/