
ADHD এর আদ্যোপান্ত
এডিএইচডি(ADHD) এক ধরণের নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার যার পূর্ণরূপ করলে দাঁড়ায় Attention Deficit Hyperactivity Disorder। পূর্ণরূপটির দিকে খেয়াল করলেই আমরা দেখতে পারি এর অর্থ দাঁড়ায় মনোযোগের ঘাটতি এবং অতিচাঞ্চল্য। এটি একধরণের মানসিক অবস্থা যখন বাচ্চারা নির্দিষ্ট কোনো কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না এবং অল্পতেই তাঁর মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়। এডিএইচডি সনাক্ত করা খুব সহজ কাজ নয়। একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় তাঁর এডিএইচডি হয়েছে কি না। গড়ে ৭ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে থেকেই এই মানসিক অবস্থাটি দেখা যায়। তবে কিছু বিষয় বা লক্ষণ আমাদের জানা থাকলে আমরা আন্দাজ করতে পারবো একটি শিশুর এডিএইচডি হয়েছে কি না। বাচ্চারা শিশুকালে চঞ্চল থাকবে এটি স্বাভাবিক হিসেবেই বিবেচনা করেন চিকিৎসকরা। অধিক চাঞ্চল্য দিয়েই এডিএইচডি নির্ণয় করা ঠিক হবে না। অন্তত লক্ষণগুলো জেনে নিলে আমরা আন্দাজ করতে পারবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে পারবো।
এডিএইচডি এর লক্ষণগুলোঃ
- এডিএইচডি যাদের হয়ে থাকে তন্মধ্যে একটি অন্যতম লক্ষণ হলো অন্যদের কথা বা কোনো নির্দেশ খেয়াল না করা। নিজের মতন করে চিন্তা করতে থাকা। দেখা যায় তাকে কোনো কাজ করতে বলা হয়েছিল কিন্তু সেটি না করে নিজের মতন অন্য একটি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
- আরো একটি লক্ষণ হলো অন্যদের কাজের মধ্যে ঢুকে পড়া হুট করে। একজন হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ব্যস্ত বা কারো সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে। এডিএইচডি আক্রান্ত শিশু এগুলো অগ্রাহ্য করে নিজের যখন ইচ্ছে হবে তখনই কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলতে চেষ্টা করবে।বিশেষ করে তাঁর বাবা-মার কাজের মধ্যে বিঘ্ন ঘটাবে।
- চারপাশে কি ঘটছে সে ব্যাপারে তাঁর মনোযোগ থাকে না এবং মনেও রাখতে পারে না।
- তাদের মধ্যে উত্তেজনায় ভরপুর থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে কিন্তু সে মনোযোগ বেশিক্ষণ দিতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায় ধাপে ধাপে করা হয় এমন গণিতগুলো করতে চায় না তারা।
- আবেগ অনুভুতি নিয়ন্ত্র করতে পারে না। অনেক বেশি রাগান্বিত বা দুঃখ পেয়ে যায়।
- এক নাগাড়ে স্থির হয়ে বসতে পারে না। অস্থিরতার মধ্যে থাকে সবসময় এবং সে কারনে জিনিশ পত্র ফেলে দেয়। অনবড়ত পা নাড়াতে থাকে, টেবিল চাপড়াতে থাকে।
- যখন নিরবতা বজায় রাখতে হয় সে সকল সময়ে দেখা যায় সে বিরুপ আচরণ করে। সেই বিশেষ পরিবেশ সম্পর্কে সে অবহিত থাকে না।
- কোন কিছু ভুল করলে এবং তা বুঝিয়ে দিলেও সে সেই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে বারাংবার একি কাজ করতে থাকে।
- অনেক সময় এডিএইচডি আক্রান্ত শিশু হট্টগোল করে না কিন্তু অনেক বেশি নীরব থাকে এবং নিজের মতো কল্পনার জগতে বিভর থাকে।
এডিএইচডি হওয়ার কারণঃ
- এডিএইচডি এর কারনের মধ্যে একটি কারণ মনে করা হয় জিনগত কারণ। পূর্বে কারো এই রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতলের মলিকিউলার সাইকায়াট্রির অধ্যাপক রয় পেরলিসের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, গর্ভাবস্থায় মানসিক রোগের ওষুধ খাওয়ার ফলে গর্ভের সন্তানের মধ্যে এডিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
- অনেক গবেষক মনে করেন, শরীরে জিংক ঘাটতি, শিশু খাদ্যে কৃত্রিম রঙ মেশানোর কারনেও এডিএইচডি হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় মাদক সেবন, ধূমপানের কারনেও হতে পারে।
- আরো ধারণা করা হয় যে শিশুকালে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারনেও এই মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
কিছু করনীয় বিষয়ঃ
• ছয় মাসের বেশি এডিএইচডি এর লক্ষণগুলো দেখা গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই শরণাপন্ন হবেন।
• এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুর জীবন স্বাভাবিক করে তুলতে পিতামাতাই প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তাদের সাথে অধিক সময় মিশতে হবে এবং তাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে।
• শিশুদের বয়স অনুযায়ী খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ সহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান নিশ্চিত করতে হবে।
• শিশুকে উৎসাহ দিতে হবে এবং ছোট খাট যেকোনো অর্জনের পুরস্কার দিতে হবে। শিশুকে বিভ্রান্ত করা যাবেনা তাকে সুস্পষ্টভাবে যে কোনো কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে।
• বাইরে খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে এতে তাঁর পর্যাপ্ত ঘুম হবে। আপনারা জেনে অবাক হবে অলিম্পিকে রেকর্ড সোনা জেতা সাঁতারু মাইকেল ফেলপ্স ছোটবেলায় এডিএইচডিতে আক্রান্ত ছিলেন নয় বছর বয়স থেকে। পরবর্তীতে তিনি সাঁতারে নিজেকে অনেক মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর এডিএইচডিও কাটিয়ে উঠেন।
এডিএইচডি নিয়ে কিছু ভুল ধারণাঃ
- এডিএইচডি নিয়ে কিছু ভুল ধারণার মাঝে একটি হলো, এডিএইচডি এর সাথে অন্যান্য মানসিক সমস্যার সম্পর্ক নেই। কিন্তু দেখা যায় পরবর্তীতে কনডাক্ত ডিসঅর্ডার , মুড ডিসঅর্ডার , শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে।
- হাইপার একটিভ কেই অনেকে এডিএইচডি মনে করেন। বাচ্চাদের মধ্যে চাঞ্চল্য বিরাজ করবে এটি স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়। শুধুমাত্র হাইপার একটিভ দিয়ে এডিএইচডি নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
- অনেকের ধারণা থাকতে পারে শুধু ওষুধেই এই রোগ সেরে যেতে পারে। কিন্তু এডিএইচডি এর ওষুধ যত কম খাওয়া যায় তত ভালো কারণ ওষুধের প্রভাব ৬-৮ ঘন্টা থাকে। ওষুধ খাওয়ার থেকে তাঁর আচরণ এবং জীবনের নিয়মকানুনের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত।
- এডিএইচডি শুধুমাত্র বাচ্চাদের হয়ে থাকে ব্যাপারটি এমন নয়। বাচ্চাদের মাঝে বেশি দেখা যায় তবে পূর্ণ বয়স্ক অনেকেরই হয়ে থাকে। তখন এই রোগের বিশেষ মাত্রা দেখা যায়।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1566401/শিশু-এডিএইচডিতে-আক্রান্ত-হলে-করণীয়-কী
http://shoshikkha.com/archives/4040
https://bengali.whiteswanfoundation.org/article/dispelling-the-myths-about-adhd/
https://www.healthline.com/health/adhd/signs