
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাদা আটা এবং সাদা চালই বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। বাজারেও সব থেকে বেশি এই ধরণের খাদ্য দ্রব্য দেখা যায় বেশি এবং ক্রেতাদের চাহিদাও এই সাদা আটা এবং চালকে কেন্দ্র করে। কিন্তু একটু যদি আমরা এদের খাদ্য গুনাগুণগুলোর দিকে লক্ষ্য করি দেখা যাবে সাদা আটার থেকে লাল আটার খাদ্য গুনাগুণ অধিক এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। সাদা আটা খেতে বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে বলে বাজারে এর চাহিদা বেশি কয়েক দশক ধরেই। কিন্তু এক সময় এই লাল আটাই খাওয়া হতো। পরবর্তীতে সাদা আটার প্রচলন ঘটে যাকে মূলত রিফাইন আটা বলা হয়ে থাকে। সাদা এবং লাল আটার মধ্যে পার্থক্য হলো- সাদা আটায় গমের খোসা ছাড়িয়ে এরপর পিসে রিফাইন করা হয় অন্যদিকে লাল আটায় খোসা সমেত পিসে আটায় রুপান্তর করা হয়। আর এই খোসার মধ্যেই থাকে অনেক খাদ্য গুনাগুণ যার সম্পর্কে এই ব্লগে আলোচনা করা হবে।
সাদা ও লাল আটার পুষ্টি গুনাগুনের মধ্যে পার্থক্যঃ
লাল আটা কেনো বেশি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা আমরা এদের মধ্যকার পুষ্টিগুনাগুনের পার্থক্যের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো।
৩৮ গ্রাম সাদা আটার পুষ্টিগুণ:
১. ক্যালোরি: ৮৭ কিলোক্যালরি
২. ফ্যাট: ৭ গ্রাম।
৩. কার্বোহাইড্রেট: ৬.০ গ্রাম
৪. খাদ্য আশঁ ১.৫ গ্রাম
৫. প্রোটিন ৩.৪ গ্রাম।
৩৮ গ্রাম লাল আটার পুষ্টিগুণ:
১. ক্যালোরি: ২৮ কিলোক্যালরি
২. ফ্যাট: ২.৫ গ্রাম।
৩. কার্বোহাইড্রেট: ৯.১ গ্রাম।
৪. খাদ্য আশঁ: ২.৮ গ্রাম।
৫. প্রোটিন ৫.৫ গ্রাম।
লক্ষ্য করে দেখুন, সাদা আটার তুলনায় লাল আটার ক্যালরী কম এবং ফ্যাটও অনেক কম। পাশাপাশি খাদ্য আঁশ ও প্রোটিন দুটোই সাদা আটার তুলনায় লাল আটায় বেশি। সাদা আটার তুলনায় লাল আটায় ভিটামিন এবং মিনারেল বেশি থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে অপরিহার্য। রিফাইন পদ্ধতিতে সাদা আটায় ১৪ রকমের ভিটামিন এবং ১০ রকমের খনিজ পদার্থের গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। খেতে সুস্বাদু হলেও লাল আটায় আপনি বেশি মাত্রায় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ পাবেন।
লাল আটার স্বাস্থ্যগত উপকারীতাঃ
- গমের খোসায় অধিক মাত্রায় নিউট্রিয়েন্ট এবং আঁশ থাকে। এই আঁশ মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে এবং নানা ধরণের করোনারী হৃদরোগ, স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। ১৭,৪২৪ জনের উপর একটি স্টাডিতে দেখা গিয়েছে যে যারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শর্করার মধ্যে এই আঁশ যুক্ত খাবার রাখেন তাদের হৃদরোগ ৪৭ শতাংশ কমে যায়।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস ও স্থুল রোগীর রক্তের চিনি ও শর্করা নিয়ন্ত্রন করে।
- লাল আটা সহজে হজম হয় না। যার কারনে এটি মানুষের ক্ষুধা কমিয়ে দেয় এবং বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন তাদের জন্যে বেশ উপকারী। লাল আটায় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হয় এবং অনেক সময় উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে যা আমাদের দেহের হজম প্রক্রিয়ার জন্যে উপকারী।
- ওজন নিয়ন্ত্রের জন্যে আরো একটি গুনাগুণ হলো লাল আটা মানবদেহে ক্ষতিকর ফ্যাট কমিয়ে উপকারী ফ্যাট এর পরিমান নিয়ন্ত্রন করে।
- লাল আটায় লিগানন নামক উপাদান রয়েছে যা ক্যন্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাছাড়া আঁশযুক্ত খাবারের ফাইটিক এসিড, ফেলোনিক এসিড এবং স্যাপোনিন্স ক্যান্সারের গতিকে মন্থর করে দেয়।
- আঁশ যুক্ত খাবার বা লাল আটার মতন খাবারের মাধ্যমে প্রদাহজনিত (inflammation) সমস্যা থেকে মুক্ত করে। স্টাডিতে দেখা গিয়েছে, যারা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বা আঁশ ছাড়া আটা/চাল থেকে আঁশ যুক্ত খাবার বেঁছে নিয়েছে তাদের মধ্যে এই প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে মুক্ত হয়েছে।
- আঁশ যুক্ত আটায় ভিটামিন বি- থাইয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নাইয়াসিন এর আধিক্য লক্ষ্য করা যায় যা মেটাবলিজমে সাহায্য করে থাকে। আরো একটি ভিটামিন বি হলো ফল্যাট বা ফলিক এসিড যা রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা গঠনে ভূমিকা পালন করে এবং বাচ্চার জন্মের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার কমাতেও সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের জন্যে মাল্টিভিটামিনের পাশপাশি আঁশযুক্ত খাবারের ভিটামিন বেশ উপকার করে থাকে।
- ভিটামিনের পাশাপাশি লাল আটায় খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় যেমন, আয়রন মানুষের দেহে অক্সিজেন সারা দেহে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি জিঙ্ক ও পাওয়া যায় যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
এতো এতো উপকার দেখে বুঝতেই পারছেন সাদা আটার তুলনায় লাল আটার প্রয়োজনীয়তা কত বেশি। মুখরোচক খাবারের তুলনায় আমাদের ভাবতে হবে আমাদের স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী উপকার কি করে আসে এবং সে অনুযায়ী খাদ্যাভস তৈরি করা। তাই সাদা আটার বদলে লাল আটা আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন।
তথ্য সহায়িকাঃ
১। https://www.huffpost.com/entry/whole-grains-health-benefits_n_5655022
২। https://blog.khaasfood.com/red_flour/
৩। "Whole Grain Fact Sheet". European Food Information Council. 1 January 2009.