
কমবেশী আমাদের সবারই সাধারণ রোগসমূহ বা যে কোনো দূর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রয়েছে এবং এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কখনও কখনও আমরা ভুল চিকিৎসা প্রয়োগ করে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ করে দেই যা হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসা দেয়া আরও কঠিন করে তোলে। এটি যে শুধু মারাত্মক ভুল তাই নয়, বলা যায় অজান্তেই রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। তাই আজ চলুন জেনে নেয়া যাক প্রাথমিক চিকিৎসার যেই পাঁচটি ভুল নিতে পারে আপনার জীবন।
এক। পোড়া ত্বকের প্রাথমিক চিকিৎসায় মারাত্মক ভুল :
ত্বকের কোনো স্থানে পুড়ে গেলে প্রাথমিক ভাবে অনেকেই মাখন বা কোন অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা চর্বিজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে থাকেন, অনেকে আবার কাচা ডিমের কুসুম ও ব্যবহার করে থাকেন যা সম্পূর্ণরূপে ভুল। এর ফলে পোড়া জায়গায় সংক্রমিত হতে পারে এবং চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পর চিকিৎসা দেয়া আরো কঠিনতর হয়ে পড়ে।
সুতরাং কোনও জায়গা পুড়ে গেলে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে যা করতে পারেন তা হ'ল পুড়ে যাওয়া ত্বকে অনবরত ঠান্ডা পানি ঢেলে শীতল করা, যদি ঠান্ডা পানি হাতের কাছে না ও পাওয়া যায় তবে আপনি ঠান্ডা দুধ ঢালতে পারেন, তবে মাখন বা কোনও চর্বিযুক্ত পদার্থগুলো জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এমনকি পোড়া ত্বকের জন্য দুধও ভাল নয় যদি না তা ঠাণ্ডা হয়।
দুই। সাপে কাটা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা :
সাপের কামড়ের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে আক্রান্ত জায়গায় মুখ দিয়ে বিষ চুষে ফেলে দেয়ার মত মারাত্মক প্রবণতা দেখা যায় যা সাধারণত সিনেমাতে শেখানো হয়। আসলে এতে কোনো কাজই হয়না। বরং যে ব্যক্তি বিষ চুষে নেয় সেও আক্রান্ত হতে পারে। কারণ সাপ কাটার পরে, বিষ কখনও এক জায়গায় বসে থাকে না, বরং রক্তের সাথে প্রবাহিত হয় এবং দ্রুত সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সম্ভবত ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাথমিক চিকিৎসার একটি।
মনে রাখবেন যে সাপের কামড়ের চিকিৎসা করার একমাত্র নিরাপদ এবং সঠিক উপায় অ্যান্টি-ভেনম। তবে প্রাথমিকভাবে বিষের বিস্তার ধীর করতে স্থির এবং শান্ত থাকুন। এছাড়াও ক্ষতের জায়গায় কেটে রক্ত বের করার চেষ্টা করবেন না এবং কোনো ব্যান্ডেজ বা বরফ প্রয়োগ করবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
তিন। নাক দিয়ে রক্ত পড়লে মাথা পিছনে কাত করা
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে মাথা পিছনে কাত করলে অবশ্যই নাক থেকে রক্ত বের হওয়া বন্ধ হয় সাময়িকভাবে। তবে এটি রক্ত গলা দিয়ে প্রবাহিত করতে পারে এবং বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। যদি আপনার খুব বেশি রক্তপাত হয় তবে আপনার শ্বাসরোধ হতে পারে। এর পরিবর্তে, আপনার মাথাটি সামনের দিকে কাত করুন এবং প্রায় দশ মিনিটের জন্য আপনার হাতের আঙ্গুল দিয়ে বারবার নাক চেপে চেপে ধরুন । এটি করার সময় আপনার মুখ দিয়ে শ্বাস নিন।
এভাবে তাড়াতাড়ি রক্তপাত বন্ধ করা যায়। যদি রক্তপাত বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকে তবে অবশ্যই হাসপাতালে যান।
চার। হার্ট অ্যাটাক রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার মারাত্মক ভুল
আমাদের মধ্যে দশ জনের মধ্যে একজন বিশ্বাস করে যে হার্ট অ্যাটাকের দ্বারা আক্রান্ত রোগীকে বসানোর পরিবর্তে শুইয়ে রাখা একটি ভাল ধারণা, তবে এটি আসলে রোগীর পক্ষে শ্বাস নেওয়া আরও কঠিন করে তুলতে পারে। বরং রোগীকে হাঁটু ভাঁজ করে আধা-বসে থাকা পজিশনে রাখলে তাদের আরও গভীরভাবে শ্বাস নিতে সহায়তা করবে এবং রোগীর মাথা এবং কাঁধকে অবশ্যই সাপোর্ট দিতে হবে। খুবই ভালো হয় যদি আপনি ইউটিউবে এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও দেখে নেন।
আর যদি হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। সিপিআর হলো কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসসিটেশন । ইউটিউবে সিপিআর দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে অসংখ্য ভিডিও আছে, দেখে নিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের থেকে হাতে কলমে সিপিআরের কলাকৌশল শিখে নেওয়া যায়। এতে করে চরম বিপদের মুহূর্তে আপনার এ জ্ঞান অন্যের জীবন বাঁচানোর উসিলাস্বরূপ হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, সিপিআর পদ্ধতিটি কেবলমাত্র হৃৎপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করলেই প্রয়োগ করা যাবে। এতে হৃৎপিণ্ড কাজ না করলেও সাময়িকভাবে দেহের মধ্যে রক্তপ্রবাহ চালু থাকবে।
পাঁচ। বিষ খাওয়া রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার ভুল ধারণা
কোনও বিষাক্ত কিছু গিলে ফেললে বমি করানোর চেষ্টা করা খুবই সাধারণ অথচ প্রাণঘাতী একটি সিদ্ধান্ত । বমি করার ফলে এটি আরও ক্ষতি করতে পারে এবং রোগীর শরীরের অবস্থা আরও খারাপ করে দিতে পারে - যেমন আপনার গলা জ্বলা, শ্বাসরোধ করা বা আপনার পেট খালি করা যাতে বাকি বিষ শরীর দ্রুত শুষে নেয়। প্রতিটি বিষ আলাদা হয়, তাই আপনি বা আপনার সাথে থাকা কেউ বিষ গিলে ফেললে অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া উচিত এবং জরুরি সেবা আসার অপেক্ষার মুহূর্তে আপনি কী করবেন সে সম্পর্কে চিকিৎসক বা তার সহকারীর নির্দেশনা পালন করুন। আর যদি পদার্থটি এখনও মুখে লেগে থাকে তবে এটিকে দ্রুত মুছে ফেলুন। রোগী কী গিলেছে তার অন্য কোনও প্রমাণের সাথে এটিও রাখুন।
তথ্যসূত্র:
Williams, D. M. (2014, November 27). Six of the Scariest First Aid Misconceptions Out There - And the Right Treatments . Retrieved from CPR Certified: https://www.cprcertified.com/blog/six-of-the-scariest-first-aid-misconceptions