
ইদ-উল- আজহা মানেই সকাল, দুপুর, রাত প্রত্যেক বেলার খাবারের তালিকাতেই থাকবে মাংস আর মাংস। এই সময় যে মাংস না খেয়ে থাকবেন তাও
সম্ভব হয় না। আর এই ইদে কুরবানীর পশু, এর লালন-পালন, জবাই, পরিবার-প্রতিবেশি-গরীবদের মাঝে মাংস বিতরণ এই সব
কিছু মিলিয়ে আলাদা একটি আমেজ কাজ
কিরে।আর এরই পাশাপাশি পরিবারের সবার সাথে খাওয়া, মাংসের অনেক ধরনের আইটেম
খাওয়া আরো কত কি! তবে কুরবানীর ঈদে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া, খাদ্যাভাস পরিবর্তন আমাদের
শরীরের যেমন ক্ষতির কারন হতে পারে, আবার তেমনি এলাকায় এলাকায় গরু-ছাগল কুরবানী
দেয়ারসময়পরিচ্ছন্নতার নাকাল অবস্থা হয়ে পড়তে পারে যদি আমরা কিছু
বিষয় মাথায় না রাখি। আসুন জেনে নেই কুরবানী ইদে আমাদের কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত এবং কীভাবে নিজের শরীর এবং পরিবেশ দুটো
আমরা ঠিক রাখতে পারি।
কুরবানীর ইদের খাদ্যাভাসঃ
· ইদের দিন সকালে নিউট্রিয়েন্ট জাতীয় খাবার দিয়ে খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। ফল-মূল, ফলের রস, কিংবা ফাইবার জাতীয় খাবার (ওটস), ডিম ইত্যাদি। দিনের বাকি সময় যেহেতু মাংস খেতে হয় সে ক্ষেত্রে সকালে এই সকল কম ক্যালরির খাবার খেলে সারাদিন মাংস খেতেও সুবিধা হবে এবং হজমেও সহায়তা করবে।
·
তিন বেলা না খেয়ে
চার- পাঁচ বেলা খাওয়া এবং প্রত্যেক বেলায় বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
এতে করে অতিরিক্ত কোনো খাবার খাওয়াও হবে না পাশাপাশি অনেক ধরণের মাংসের রেসিপিও
আপনি খেতে পারবেন সারাদিন জুড়ে। এক বেলায় বেশি খেয়ে ফেললে গ্যাস, অম্বল, ডায়রিয়া
হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে চার-পাঁচ বেলা করে খেলে এই সকল রোগ থেকে
রেহাই পেতে পারেন।
·
ঈদ মানেই আনন্দ
কিংবা খাবার ভাগাভাগি করে নেওয়া। মিষ্টি জাতীয় খাবার অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে
খাবেন তাহলে সুগার ইনটেক (sugar intake) কম
হবে ইদের দিন। সারাদিন মাংস খাওয়া এবং তারউপরযদি বেশি মিষ্টি খাওয়া পড়েতাহলে সব মিলিয়ে শরীরের জন্য ক্ষতির
কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
·
ঈদে মাংস খাওয়ার
পাশাপাশি অনেক বেশি কোমল পানীয় খাওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। যা শরীরের জন্য আরো
ক্ষতিকর। কোমল পানীয় এর বদলে লেবুর শরবত বা ফলের রস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
হবে।
·
মাংস গ্রিল করে
খাওয়ার চেষ্টা করবেন বেশি মসলাদার বা ফ্রাই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নানা রকমের
কাবাব স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আরো কিছু সচেতনতাঃ
Ø ঈদের সময় রাতে কিংবা সকালে ৩০-৪০ মিনিট হাটাহাটি কিংবা জগিং
করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে শরীরে মেদ জমার আশংকা থাকে।
গরু এবং ছাগলের মাংসতে কোলেস্টেরল এবং চর্বি রয়েছে যা মেদ জমা
কিংবা হার্ট ব্লকের কারন। তাই প্রতিদিন হাটাহাটি কিংবা জগিং করার চেষ্টা করবেন।
Ø চিনি ছাড়া গ্রিন টি অথবা লেবুর শরবত খাওয়ার অভ্যাস করতে
পারেন প্রত্যেক বেলায় যা আপনার শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দিবে।
কিছু রোগবালাই এবং এর জন্য ওষুধঃ
বেশি মাংস খাওয়ার ফলে যে সমস্যাটির
সম্মুখীন হতেপারেনতা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এর থেকে প্রতিকারের জন্য রাতে কিংবা
সকালে এক গ্লাস ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। তাছাড়া ল্যাক্সাটিভ ধরণের ওষুধ খেতে
পারেন যা আপনার কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করতে পারে। তবে খাদ্যাভাসে এক বেলা শাকসবজি
রাখার চেষ্টা করবেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে প্রতিকার পেতে পারেন। আবার অনেকের ব্লাড প্রেসার হাই হওয়ার সম্ভবনা
থাকে তাদের জন্য ACE Inhibitors ,ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, ARB ধরণের ওষুধ রয়েছে তবে এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে অম্বল বা
গ্যাস হয়ে থাকে অনেকেরই।এর জন্য আছে রেনিটিডিন, এস্মোপ্রাজল, ওমিপ্রাজল,
পান্টনিক্স ধরণের ওষুধ। এগুলোও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। তাছাড়া
অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়, হার্টে ব্লক হয় যা শরীরের জন্য
দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি করতে পারে এর জন্য আগে থেকেই সচেতন হওয়া জরুরী। সঠিক
খাদ্যাভাস, হাটাহাটি এবং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এইসকল রোগের ঝুঁকি এড়ানোর
জন্য।
কুরবানীর ইদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ
নিজের শরীরের যেমন খেয়াল রাখা উচিত
তেমনি আশেপাশের পরিবেশের প্রতিও খেয়াল রাখা দরকার। বর্ষার মৌসুমে মশার উপদ্রব
খেয়াল করতে পারছেন ইদানীং। ডেঙ্গুর মহামারী ঢাকা শহরকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। পশুর
জবাইয়ের পর যে রক্ত জমে তা রোগজীবানু সহ মশার উপদ্রব বাড়িয়ে তুলে। পরিষ্কার
পরিচ্ছন্নতা জন্য এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা যেতে পারেঃ
- ·
কুরবানীর পর যত
দ্রুত পারা যায় পশুর চামড়া ছাড়িয়ে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে সেখানে
ফেলে চামড়া নষ্ট করা যাবেনা।
- ·
মাংস কাটার
উচ্ছিষ্টাংশ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট একটি স্থানে জমিয়ে রেখে পরে তা
ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। অথবা কোনো স্থানের মাটি গর্ত করে সেখানে পুতে ফেলুন।
- ·
পশুর ভুড়ির বর্জ্য
যেখানে সেখানে ফেললে দুর্গন্ধ এবং পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই এই বর্জ্যগুলো গর্ত করে
পুতে রাখুন কিংবা বস্তায় ভরে রেখে ডাস্টবিনে ফেলুন।
- ·
কুরবানীর কার্যক্রম
শেষ হলে যে জায়গায় কাজ করা হয়েছে সেখানের রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। পরিষ্কার
করার সময় স্যাভলন পানি ব্যবহার করুন জীবানুমুক্ত করার জন্যে।
এরকম কিছু পদক্ষেপ নিলে আপনি আপনার এলাকায় কুরবানীর পরও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবেন এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারবেন। কুরবানীর জন্য অন্য কারো যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকে আমাদের সজাগ থাকা নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে মাত্রাতিরিক্ত মাংস খাওয়াথেকেবিরত থাকতে হবে এবং খাদ্যাভাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। ইদ আপনাদের সকলের ভালো কাটুক এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকুক সে কামনা করি। কুরবানীর ইদ পালন করুন ত্যাগের মাধ্যমে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়িয়ে, পাশাপাশি এলাকার পরিবেশকে সুন্দর রেখে।
তথ্যসূত্রঃ
১। https://www.thedailystar.net/health/health-tips/tips-healthy-eid-ul-azha-1283734
৩। https://m.banglanews24.com/lifestyle/news/bd/263439.details