অষ্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে করনীয়
শৈশব, কৈশোর অথবা যৌবনকালে অর্থাৎ বাড়ন্ত বয়সে হাড়ের বৃদ্ধি সাধন হয় সেই সময়টাই হাড়কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আসল সময়। এ সময় হাড়ের ঘনত্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে গঠন কওরে নিতে পারলে তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয় এবং ভাঙ্গার ঝুকির বিরুদ্ধে টিকে থাকতে সক্ষম হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় তার ক্যালসিয়াম ও ফসফেট হারিয়ে দুর্বল হতে থাকে এবং ঝুকিও বাড়তে থাকে। তাই শক্তিশালী রাখতে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি –
১। সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরন করা
ক্যালসিয়ামঃ
আপনার খাদ্যতালিকায় যেন প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
আমাদের শরীরে প্রতিদিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা নিম্নরূপ –
১ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম
১১ থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম
২৪ বছরের বেশী বয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম
গর্ভবতী ও স্তন্যদানরত মায়ের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম
মেনপজ পরবর্তী মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম
যাদের অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি আছে এমন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম।
কি কি খাবারে ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশি থাকে?
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ
সবচেয়ে বেশী ক্যালসিয়াম থাকে দুগ্ধজাত খাদ্যে যেমন –
১ গ্লাস ননী তোলা দুধে থাকে ৩০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৮৫ ক্যালরি শক্তি
কম স্নেহজাতীয় দই এ থাকে ৪১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১৪৫ ক্যালরি শক্তি
সয়া প্রোটিন – টফু (প্রতি ৪ আউন্সে ৫০০ মিলিগ্রাম)
সবুজ ফুলকপি বা ব্রকলি প্রতি ৪ আউন্সে ৪৫ মিলিগ্রাম
কলার্ড প্রতি কাপে ১৫০ মিলিগ্রাম
শালগম প্রতি কাপে ২০০ মিলিগ্রাম
সার্ডিন মাছ বা সামুদ্রিক মাছ প্রতি ৩ আউন্সে ৩৭৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন – ডি
আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়। ভিটামিন ডি দেহে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে হাড়ের গঠনে সহায়ক ভুমিকা রাখে।
প্রতিদিন ভিটামিন ডি গ্রহনের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪০০ আন্তর্জাতিক একক (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)
ভিটামিন- ডি সমৃদ্ধ খাবারঃ
এই ভিটামিন পাওয়া যায় ডিমে, মার্জারিনে, কড লিভার তেলে, সামুদ্রিক মাছে ও গরুর কলিজায়। তাছাড়াও সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস, তাই মাঝে মধ্যে সূর্যলোকে যাবেন। আপনার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরির জন্য প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ মিনিট সূর্যলোকে থাকলেই যতেস্ট।
অন্যান্য খাবারঃ
আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত করুন, এতে আপনার পেশী সুগঠিত হয়ে আপনার নড়াচড়া নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে ফল খান যাতে ভিটামিন – বি, ভিটামিন – সি, ভিটামিন – কে, খনিজ পদার্থ যেমন- ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন থাকে যা হাড়ের গঠনে সহায়তা করে ।
২। নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করুনঃ
যারা নিয়মিত হাটেন, ব্যায়াম করেন ও কায়িক পরিশ্রমে অভ্যস্ত তাদের হাড়ের ক্ষয় ও হাড় ভাঙ্গার ঝুকি কম হয়ে থাকে ।
নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করলে কি কি উপকার হয়?
নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করলে –
মাংসপেশী ও হাড়ের শক্তি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায় ।
হাড় ও হৃৎপিন্ডকে শক্তিশালী করে।
জয়েন্ট গুলো কে সচল রাখে ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ।
বৃদ্ধ বয়সে হাড়ভাঙ্গার একটা প্রধান কারন অস্টিওপোরসিস বা হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া বিশেষ করে
মহিলাদের হিপ ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে । ব্যায়াম অস্টিওপোরসিস কমায় ।
ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয় ফলে পড়ে যেয়ে হাড় ভাঙ্গার ঝুকি কমে
ব্যাথা কমে
আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি পায় ।
৩। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুনঃ
ধূমপানের দেহের হাড় গঠনকারী কোষ অস্টিওব্লাস্ট এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় যার ফলে হাড়ের ক্ষয়ের ঝুকি অনেক বেড়ে যায় ।
অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনে পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙ্গার ঝুকি অনেকাংশে বেড়ে জয়ায়, তাই অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন ।
৪। পতন রোধ করুনঃ
সঠিকভাবে ভারসাম্য রক্ষা এবং সমন্বয় সাধন করতে না পারায় বয়স্কদের প্রায়ই পড়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখা যায় । যার ফলে নিতম্বের হাড় ভেঙ্গে যায় এবং পরবর্তীতে তাদের জীবনধারার উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে । তাই হাড় ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পড়ে যাওয়া বা পতন রোধ করা খুব জরুরী । এজন্য সিঁড়ির পাশে দেয়ালে হ্যান্ড রেইলের ব্যাবস্থা রাখুন, বাথরুমে সম্ভাব্য পতনের ঝুকি রোধে ধরার রড বা স্তম্ভ রাখুন। যেসব ঘরের মেঝে পিচ্ছিল সেগুলো কার্পেট দিয়ে ঢেকে দিন। অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোর ব্যাবস্থা রাখুন এবং রাতের বেলায় মৃদু আলোর বাল্ব জ্বালিয়ে রাখুন ।
ডা: এম ইয়াছিন আলী
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
বাড়ি-১২/১, রোড-৪/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা ।
01787-106702