
নতুন একটি শিশুর জন্ম মানেই চারদিকে খুশির ফোয়ারা বয়ে যাওয়া। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই প্রবল প্রতীক্ষায় থাকে কখন নবজাতককে একনজর দেখবে। তাই জন্মের পরপরই নবজাতককে দেখতে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। তবে আমাদের অানন্দ যেন নবজাতক ও তার পরিবারের বিড়ম্বনার কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতেই আমার আজকের এ লেখা। আশা করছি লেখাটি সম্পূর্ণ পড়লে নবজাতক শিশু দেখতে যাওয়ার সময় কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা সহজেই বুঝতে পারবেন।
এক) যাওয়ার আগে একটি ফোন দিনঃ দয়া করে কখনও হুটহাট অসময়ে উপস্থিত হবেননা! একটি ফোনকল আপনাকে ও নবজাতকের পরিবারকে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবে। আপনি ও বুঝতে পারবেন এই মুহূর্তে তারা কী অবস্থায় আছে, আপনার যাওয়ার উপযুক্ত সময় কিনা।
দুই) নতুন মায়ের জন্য কিছু খাবার নিতে পারেনঃ কিছু ফল কিংবা ঘরে তৈরি কোনো স্বাস্থ্যকর খাবার এই সময়ে নতুন মায়ের জন্যে অনেক কিছু।
তিন) আপনার হাত ধুয়ে যানঃ নবজাতকের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা অপরিণত। আপনার শরীরের জীবাণু নবজাতকের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সম্ভব হলে দেখা করার আগে গোসল করে যান আর সম্ভব না হলে আপনার হাত, পা, মুখ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে যান।
চার) কখনই অসুস্থ অবস্থায় যাবেন নাঃ নবজাতকের সামান্য ঠান্ডা লাগলেও পরিবারের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। শিশুদের সাধারণ ঠাণ্ডা থেকেই অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আপনি যদি অসুস্থ হন তবে দয়া করে বিষয়টি বিবেচনা করুন এবং আপনি পুরোপুরি ভাল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
পাঁচ) আপনার কাপড়ে সিগারেট বা খুব কড়া পারফিউমের গন্ধ থাকা যাবেনাঃ আপনি যদি ধূমপায়ী হন তবে নবজাতকের সাথে দেখা করার আগে দয়া করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার পোশাকটি পরিষ্কার এবং দুর্গন্ধবিহীন। অনেকেই বিশেষত বাচ্চারা ধূমপান এবং পারফিউমের কড়া গন্ধের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ বিষয়টি তাই মাথায় রাখুন।
ছয়) নতুন মাকে প্রশংসা করুনঃ একজন নতুন মা প্রায়শই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। শরীরে চর্বি বেড়ে যাওয়ায় নিজেকে কুৎসিত ভাবা, ক্লান্ত ও হতাশ অনুভব করা মাকে আন্তরিক ও হৃদয় নিঃসৃত প্রশংসা করে দেখুন, এটা তার দিনটাই পাল্টে দেবে!
সাত) বাচ্চাকে চুমু দেওয়া হতে বিরত থাকুন এবং কোলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুনঃ বেশিরভাগ নতুন পিতা-মাতার পক্ষে বিষয়টি সত্যিই অস্বস্তিকর যখন আপনি অনবরত শিশুটিকে চুমু দিচ্ছেন অথচ তারা ভদ্রতার খাতিরে আপনাকে নিষেধ করতে পারছেনা আবার বিষয়টি পছন্দ ও করছেনা। দয়া করে এটি করবেন না। এ নিয়ে শিশুর পিতামাতাকে জিজ্ঞাসাও করবেননা। এমনকি শিশুটিকে সারাক্ষণ কোলে নিয়ে থাকার আশাও করবেন না। অনেকেই ছোট্ট শিশুদের কোলে নিতে পছন্দ করেন। তবে খেয়াল রাখবেন এটি যেন শিশুর অস্বস্তির কারণ না হয়। অনেক সময় আপনি যখন গিয়েছেন তখন হয়তো শিশুটি ঘুমাচ্ছে বা খাচ্ছে অথবা কান্নাকাটি করছে। এমতাবস্থায় শিশুটিকে কোলে নেওয়ার আবদার না করাই ভালো। আবার কিছু বাচ্চা অত্যধিক সংবেদনশীল হওয়ায় বাবা-মাকে হয়তো শিশুকে শান্ত করার জন্য কয়েক ঘন্টা ব্যয় করতে হতে পারে। তাই কোলে নেওয়ার পূর্বে অনুমতি নিন।
আট) জোরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুনঃ আপনার উচ্চ শব্দের কথা বা হাসির শব্দে নবজাতকের ক্লান্ত মা-বাবাই যে শুধুমাত্র বিরক্ত হবে তা নয়, নতুন শিশুটিও চমকে উঠতে পারে। তাই এধরণের আচরণ হতে বিরত থাকুন। আর দেখতে যাওয়ার সময় সঙ্গে অপরিণত শিশু যারা হৈচৈ করতে পারে তাদের না নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
নয়) নতুন কাজ তৈরি করবেন নাঃ নবজাতক এবং নতুন পিতামাতার সাথে দেখা করার সময়, আপ্যায়নের জন্যে অপেক্ষা করবেন না বা আশা করবেন না। বরং নিজ থেকেই খাবার টেবিলে সার্ভ করুন। প্রকৃতপক্ষে, আপনার নিজের খাবারের প্লেট বা পানির গ্লাস কিংবা চায়ের কাপটি নিজেই পরিষ্কার করুন। এছাড়াও আপনি যদি মা বা শিশুর জন্য উপহার আনেন তবে আপনি নিজেই র্যাপিং কাগজটি পরিষ্কার করুন।
দশ) সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনও ছবি শেয়ার করবেন নাঃ বাচ্চা বা তার পরিবারের কোনও ছবি তাদের অনুমতি ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন না। তারা হয়তো ফেসবুক/ইন্সটাগ্রামে বা অন্য যে কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিতে আগ্রহী নাও হতে পারে, তাই তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করুন।
এগার) সাহায্য করার মানসিকতা রাখুনঃ সর্বদা সাহায্য করার জন্য জিজ্ঞাসা করুন । সাধারণত অনেক কাজই করার থাকে যা একজন নতুন মা সবসময় একা পেরে ওঠেন না। কাপড় ধোয়া, থালা বাসন পরিষ্কার করা, বাথরুম/রান্নাঘর পরিষ্কার করা, আবর্জনা ফেলে দেওয়া, বাচ্চার ডায়াপার পালটে দেওয়া এরকম অসংখ্য কাজ রয়েছে। আপনার সাধ্যমত যতটুকু সম্ভব করুন।
আর একটি বুদ্ধি হলো নবজাতককে দেখতে যাবার আগে তার মা বাবার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চান যে তাদের কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন কিনা। কিছু লাগলে আপনি কিনে নিয়ে যান। বিশ্বাস করুন এটি অনেক বড় একটি সাহায্য হবে নতুন মা-বাবার জন্যে।
বারো) আপনার সাক্ষাৎ দীর্ঘায়িত করবেন নাঃ আপনি যদি কোন কাজে সাহায্য করতে না পারেন তাহলে দেখা করতে খুব বেশি সময় নেবেন না। হতে পারে শিশুটির বাবা-মা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার নবজাতক যখন ঘুমাচ্ছে, তার ক্লান্ত বাবা-মা এর ও তখন একটু ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে। তাই আপনার সাক্ষাৎ আধ ঘন্টার বেশি লম্বা করবেন না। এমনকি আপনি যদি শিশুটির খুবই কাছের আত্মীয় ও হয়ে থাকেন, তাহলেও শিশুর কক্ষে বেশী সময় অবস্থান করবেন না। বরং নতুন মাকে বিশ্রামের সুযোগ দিন।
উপরের বিষয়গুলো মেনে নবজাতককে দেখতে গেলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ বালাই থেকে যেমন নবজাতককে মুক্ত রাখা যাবে তেমনি নতুন মাকেও অনেকটাই স্বস্তি দেয়া যাবে। আর আপনাদের যদি আরো কোন পয়েন্ট মনে পড়ে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টে যোগ করতে ভুলবেন না।
তথ্যসূত্রঃ
Karen, M. (2010,
November 5). 25 Rules for Visiting a Newborn . [Lifestyle] Retrieved from
Healthy Mama Hacks : https://healthymamahacks.net/rules-visiting-newborn/