
লাল মাংস (রেড মিট), গরু ও খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস বরাবরই হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ তাই হৃদরোগীদের জন্য এই লাল মাংস খাওয়া যেন একদম ট্যাবু। অন্য যে কোনো দিনে তার সাথে মানিয়ে নেয়া গেলেও, আসছে পবিত্র ঈদ উল আজহাতে যখন বাসা ভরে থাকবে এই মাংসে, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে উঠে। তাই কিভাবে গরু অথবা খাসির মাংসও খাওয়া যাবে আবার সুস্থও থাকা যাবে, এর জন্য রয়েছে কিছু উপায়।
ইউরোপীয় হার্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, লাল মাংস খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি সম্পর্কিত রাসায়নিকের স্তর বৃদ্ধি করে। গবেষকরা ১১৩ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ট্রাইমেথিলামাইন এন-অক্সাইড (টিএমএও) স্তরকে তুলনা করেছেন, যার মাঝে একদল লাল মাংসের এবং আরেক দল সাদা মাংসের অথবা মাংস বাদে অন্য কোনো খাদ্যের ডাযে়টে ছিলেন। লাল মাংস বাদে বাকী দুটি ডাযে়টে থাকা মানুষের তুলনায় লাল মাংস খাওয়া অংশগ্রহণকারীদের রক্ত এবং মূত্রের টিএমএও এর মাত্রা বেশী ছিল এবং তাদের মাঝে রাসায়নিক বের করে দেয়ার ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। টিএমএও-র স্তরের বর্ধনশীলতা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, এবং হার্ট এ্যাটাকের কারণ এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই লাল মাংস গ্রহণ এবং হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, মৃত্যু এবং হৃদরোগের মধ্যে যোগসূত্র।
কিভাবে খেতে হবে এই ঈদে?
● একবারে ৩ টুকরোর বেশী মাংস একদমই খাবেন না!
● একদিনে যদি মাংস বেশী খাওয়া হয়ে যায়, তবে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টরেল আছে এমন সব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
● মাংস রান্নার আগে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন যাতে করে চর্বি আলাদা হয়ে আসে।
● যতটুকু সম্ভব, চর্বি এড়িয়ে চলুন।
● মাংস পাতলা করে কাটুন, তাহলে চর্বি পাওয়ার সম্ভাবলা কমে যাবে।
● ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে মাংস রান্না বা ফ্রাই না করে, কাবাব বানান, বেক করুন, ব্রয়েল কিংবা স্টু করুন তাতে করে ঝুঁকি অনেকখানি কমে যাবে।
● সালাদ ও সবজী খাবেন প্রচুর পরিমাণে।
তবে হৃদরোগীদের জন্য রয়েছে সুখবর আর তা হচ্ছে, আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন ১-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখতে পেযে়ছেন যে সবজি, ফলমূল সমৃদ্ধ ডাযে়টরি প্যাটার্ন গ্রহণের পাশাপাশি গরুর মাংস গ্রহন যেসব লোকেরা গবেষণার কারণে একটি অনুকূল চর্বিযুক্ত ডায়েট (Beef in an Optimal Lean Diet- BOLD) এ অংশ নিযে়ছিলেন তারা রক্তের কোলেস্টেরলের স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রেখেছেন শস্যজাত খাবার, বাদাম এবং মটরশুটি এর পাশাপাশি প্রাথমিক প্রোটিনের উৎস হিসাবে চর্বিমুক্ত গরুর মাংস খেয়ে। BOLD ডায়েটে প্রতিদিন চর্বিমুক্ত গরুর মাংসের পরিমাণ ১১৩-১৫৩ গ্রাম (রান্নার আগে ওজন) থাকে, এবং তা শরীরে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে ৭% এরও কম ক্যালোরি সরবরাহ করে। বোল্ড স্টাডি হৃদস্বাস্থ্যকর ডাযে়টে চর্বিযুক্ত গরুর মাংসকে সমর্থন করে এমন সব গবেষণার সর্বশেষতম সংযোজন। এমনকি, ২০ টিরও বেশি স্বাস্থ্যকর ডাযে়টরি প্যাটার্নের গবেষণায় প্রমাণিত যে, অল্প পরিমাণে চর্বিমুক্ত গরুর মাংস হৃদরোগের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। বোল্ড ডায়েটে শুধুমাত্র দুপুর এবং রাতের খাবারেই গরুর মাংস খাওয়া যাবে তবে অবশ্যই সাথে হৃদরোগের জন্য উপকারী সবজী থাকতে হবে।
ঈদ উল আজহা এর সময় সবচেয়ে বেশী সতর্ক থাকতে হবে হৃদরোগীর কাছের মানুষদের। তাদের জন্য যেন আলাদা করে গরুর মাংস রান্না রান্না হয় এবং সবাই যখন তাদের সামনে গরুর মাংস খেতে থাকবে তখন তাঁদের জন্যও যেন ভাল কোনো পদ থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণত ঈদের পরপরই অনেকের বাসায় দাওয়াতে যাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে, গরুর মাংস খাওয়া নিয়ন্ত্রনে থাকছে নাকি তা হৃদরোগীর নিজের খেয়াল রাখার পাশাপাশি তার কাছের মানুষজনেরও খেয়াল রাখতে হবে এবং দাওয়াতে গেলে আগেই তা হোস্টকে জানিয়ে দিতে হবে যাতে তিনিও লক্ষ্য রাখেন। শুধুমাত্র হৃগরোগীই না বরং সবারই উচিৎ এই লাল মাংস সতর্কতার সাথে খাওয়া। ঈদ মানে আনন্দ কিন্তু সেই আনন্দই যাতে কাল না হয়ে আসে, সেটাই সবার কাম্য।