ডিপ্রেশন যখন স্মৃতিভ্রমের কারন! Banner Photo

Ω author: PlexusD

 123  3  0

ডিপ্রেশন নিয়ে প্লেক্সাসডি’র ব্লগে আপনারা এর আগেই বিস্তারিত জেনেছেন। কিন্তু আজ ডিপ্রেশন নিয়ে এমন একটি বিষয়ে কথা বলা হবে যেটি বেশির ভাগ সময় আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। এটি হলো ডিপ্রেশনের প্রভাবে স্মৃতিভ্রম হওয়া। ডিপ্রেশন হলে মানুষ সাধারন যে লক্ষণগুলো- জীবন নিয়ে চরম হতাশা, অকারনে মন-মেজাজ খারাপ থাকা, নিজেকে মূল্যহীন মনে করা, ক্ষুধা পরিবর্তন ও ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়া ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য রাখে। কিন্তু তাঁর যে স্মৃতিশক্তি ক্ষণে ক্ষণে হারিয়ে যেতে থাকে সে দিকে খেয়াল রাখা হয় না। যার ফলে দেখা যেতে পারে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না।  


স্মৃতিভ্রম এবং মনস্তত্ত্বে প্রভাবঃ

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোরোগবিদ্যা এবং আচরণগত বিজ্ঞানের পোস্ট ডক্টরেট ক্যারি হোমবার্গ বলেছেন, “আমি যখন কোনো ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করতে যাই, চিকিৎসাপ্রার্থী প্রায়শই আমাকে তাঁর স্মৃতিভ্রমের কথা বলেন”। ডিপ্রেশনের ফলে মানুষের মস্তিষ্কের যে কোনো ধরণের তথ্য বা স্মৃতি দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে প্রক্রিয়াকরণ করে তা বাধাগ্রস্থ হয়। ব্রাইহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক দেখেছেন যে ডিপ্রেশনের ফলে মস্তিষ্কে “pattern Separation” এর মাধ্যমে মানুষ একই রকম ঘটনাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারে সেটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ফলে একজন মানুষ যত বেশি ডিপ্রেশনে থাকে সে তত বেশি একই রকম অভিজ্ঞতার মধ্যে ভিন্নতাগুলো চিহ্নিত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ সে স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে থাকে। 

পাশাপাশি যারা ডিপ্রেশনে থাকে তাদের কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দেয়া হয় না। যার ফলে কোনো কিছু মনে রাখার মতন মনোযোগও দেয়া হয় না তাদের। দেখা যায়, কোনো একটি ছুটির দিন কাটানোর পর সে দিনে সে কি মজার ঘটনা ঘটেছিল বা কোন মজার খাবার খেয়েছিল তা মনে রাখতে পারে না। আবার এমনো দেখা যায়, কারো কাছ থেকে কিছু নিলে সে বিষয়টি ভুলে যায় একদম। এরকম নানা ধরণের স্মৃতিভ্রমের শিকার হতে হয়। 


আরো একটি বিষয় হচ্ছে, অনেক কিছু ভুলে গেলেও খারাপ স্মৃতি বারবার ফিরে আসে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডেনিয়েল ডিলন বলেছেন, “ যাদের ডিপ্রেশন নেই সে সকল মানুষের মাঝে ইতিবাচক ঘটনাগুলো মনে থাকে বেশি। অন্যদিকে দেখা যায় ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলো নেতিবাচক ঘটনাগুলো বেশ শক্তপোক্তভাবে স্মৃতিতে আঘাত হানে। আর তাঁর মধ্যে ইতিবাচক স্মৃতিগুলো কমে যেতে থাকে। ২০১৪ সালের একটি গবেষণা করা হয় নেতিবাচক চেতনা বিশ্লেষণ নিয়ে। যে সকল ব্যক্তির পূর্বে ডিপ্রশনে ছিলো দেখা যায় তাঁরা নেতিবাচক বিশেষণের শব্দ মনে রাখতে পারে বেশি একটি শব্দভান্ডার থেকে একজন ডিপ্রেশন অভিজ্ঞতা ছাড়া মানুষের থেকে। ২০০৭ সালের আরো একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, একজন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন ইতিবাচক কিছু মনে করতে বলা হয় তাঁর মানসিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে খারাপের দিকে যায়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ডিপ্রেশন একজন ব্যক্তির স্মৃতির মধ্যে এতই প্রভাব ফেলে যে তাঁর স্মৃতি জুড়ে থাকে নেতিবাচক ঘটনার প্রভাব যা তাঁর মনস্তাত্ত্বিক চেতনারও পরিবর্তনও করতে পারে।  


কী করা যেতে পারে?

ডিপ্রেশন মাইল্ড বা মডারেট হলে তা নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়ে থাকে। কিন্তু বেশি গুরুতর অবস্থা হলে তা নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়ে। ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় যা করা হয়ে থাকে – চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ, সাইকো থেরাপি নেয়া কিংবা কাউন্সেলিং ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু এই চিকিৎসাগুলোতে যে বিষয়টি সব সময় উপেক্ষিত হচ্ছে তা হলো স্মৃতিভ্রমের গুরুত্ব দেয়া। চিকিৎসার সময় স্মৃতিভ্রমের বিষয়টি চিকিৎসাপ্রার্থীকে জানাতে হবে। তাঁর সাথে এই বিষয়ে খোলামেলা আলাপ অর্থাৎ কাউনসেলিং করতে হবে এবং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে। ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে যারা নেতিবাচক অনুভুতিগুলো অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে তাঁরা অনেকেই নেতিবাচক স্মৃতিগুলোর প্রভাবমুক্ত হতে পারছে। গবেষকরা এই বিষয়ে আরো ফলপ্রসূ কিছু করার চেষ্টা করছে। 

হোমবার্গ বলেছেন, “মনের ভাব (mood) উন্নত করা জরুরী”। অর্থাৎ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির সামাজিক জীবন আরো সক্রিয় করতে হবে। পরিবারের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি সক্রিয় জীবনযাপন এবং কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করতে পারেন। মানুষের সাহায্যে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। পাশাপাশি মেডিটেশন এবং ব্যায়াম তাঁর চৈতন্য সক্রিয় করার জন্যে সাহায্য করতে পারে। ডিপ্রেশনের দরুন স্মৃতিভ্রমের কারনে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সে কারনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা রুটিন ছোট কাগজে নোট করে রাখলে তা অনেকাংশে সাহায্য করতে পারে। আবার অ্যালার্ম ঘড়ির ব্যবহারের মাধ্যমে সময় জ্ঞানকে ধরে কাজ করার জন্যে সাহায্য করতে পারে। এভাবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতিভ্রমের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব। 


তথ্যসূত্রঃ

১। https://www.healthline.com/health/depression/depression-and-memory-loss#managing-memory-loss

২। https://www.brainfacts.org/diseases-and-disorders/mental-health/2019/depressions-impact-on-memory-022119 

৩। ddementia.livebetterwith.com/blogs/advice/how-does-depression-affect-memory

৪। https://www.independent.co.uk/life-style/health-and-families/depression-memory-problems-loss-symptoms-link-study-brain-cells-hippocampus-a8263251.html

৫। https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0005791613000712#bib33

৬। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/17696704


Share On Facebook

please login to review this blog and to leave a comment.


More From Hia

কোন শারীরিক সমস্যায় কোন ডাক্তার? || পর্ব #০১

published on: 01 Jun, 2021

প্রথমবারের মত ...

 26863    3    0 
ডেঙ্গুঃ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধ!

published on: 21 Jul, 2019

এই বর্ষায় বৃষ্টির সাথেখিচুড়ি তাে উপভােগ করবেনই, তবে আপনারা যাতে সুস্থতার সাথেতা করতে পারেন তাইগুরুত্বপূর্ণ এক...

 8478    2    0 
এবারের ডেঙ্গু কেনো অন্যবারের চেয়ে আলাদা?

published on: 22 Jul, 2019

এবারের ডেঙ্গু কেনো আলাদা?: এবারের ডেঙ্গু জ্বরের সাথে আগের মিল নেই। নতুন কোন শক্তিশালী ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ছড়ানো এই অসুখ এবার ঢাকায় রীতিমতো মহামারি ...

 8412    2    0 

More From Happy Life

বিয়ের আগেই হোক থ্যালাসিমিয়া পরীক্ষা!

author: Sadia Tasmia

থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিকাল রক্তের ব্যাধি যা শরীরটি হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতা তৈরি করে। হিমোগ্লোবিন ...

 1672    1    0 
ডিপ্রেশনঃ সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য একমাত্র মানসিক রোগ

author: Sadia Tasmia

বর্তমানে মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ হচ্ছে, ডিপ্রেশন (

 665    0    0 
অক্টোবরঃ স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস!

author: Hasnat Zahan Shapla

স্তন ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ক্যান্সার এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের পরেই মহিলাদের মধ্যে ক্যান্সারে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। তাই স্তন ক্যান্সার সচেতনতার এই অক্টোবর মাসে আমাদের আজক...

 173    1    0