পুরোপুরিভাবে সুস্থ্য থাকাটা এখন যেন অনেকটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। কতশত অসুখ আর ঔষধের ভিড়ে আমরা মাঝে মাঝে ভুলেই যাই যে মাত্র কিছু অভ্যাস গড়ে তুললেই আমরা কত সহজে নিজেরাই হয়ে উঠতে পারি নিজেদের প্রাথমিক ডাক্তার! এরকমই দশটা অভ্যাস হচ্ছেঃ
১. খাবারের পরিমাণ ঠিক করুন
সকালটা শুরু হতে হবে সবসময় তুলনামূলকভাবে ভারী খাবার খেয়ে যাতে করে সারাদিন কাজ করার শক্তি থাকে। রাতের খাবারটা হতে হবে হাল্কা। এতে করে আপনার ঘুম হবে আরামদায়ক এবং সকালে আপনি থাকবেন ক্ষুদার্থ।
২. খাদ্যাভ্যাস উন্নত করুন
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন মানুষকে ইমিউনিটি বাড়াতে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে। অনেক সময় তিন বেলাই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করা কষ্টকর হয়ে পরে। বিশেষ করে যখন খুব সকালে বাইরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে একটা কলা বা ওটস দিয়ে ঝটপট তৈরি করা যায় যায় এমন কোনো খাবার সাথে নিয়ে নেয়া ভাল। এক বেলার খাবার বাদ দেয়া বা দেরী করে খাওয়া কখনোই উচিৎ না। সারারাত জেগে কাজ করার অভ্যাস থাকলে, অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স না খেয়ে দুধ কিংবা ফলমূল খান।
৩.খাদ্যতালিকা হোক সবুজ শাক-সবজীতে সমৃদ্ধ
পালং শাক, পাতাকপি এবং অন্যান্য সবুজ পাতাযুক্ত শাকের মধ্যে লুইটিন এবং জ্যাক্সানথিন সর্বোচ্চ পরিমাণে থাকে। গবেষণায় দেখা যায় যে, এই দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে আপনার চোখ রক্ষা করে। Age Proof Of Your Body বইয়ের রচয়িতা পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ সোমার লিখেছেন, "এই দুটি উপাদান ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে আপনার চোখ রক্ষা করতে পারে।" এই উপাদানগুলোর অন্যান্য ভাল উৎস হচ্ছে, ডিমের কুসুম, ভুট্টা, কমলা মরিচ, কিউই এবং আঙ্গুর।
৪. খাবার তালিকায় চকোলেট, চা এবং জাম জাতীয় ফলাদি রাখুন
এই তিন ধরণের খাবার বিশেষভাবে ফ্ল্যাভোনিয়েডস সমৃদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২,000 স্বাস্থ্যবান মহিলাদের নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সর্বাধিক ফ্লাভোনিয়েড গ্রহণ করে, তাদের ইনসুলিন রেসিস্টেন্স ছিল সবচেয়ে কম। এছাড়াও, ফ্ল্যাভোনিয়েডস ক্যান্সার সহ বেশ কয়েকটি রোগের সাথে জড়িত প্রদাহকে কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন, এন্ডোক্রিনোলোজিস্ট এমডি ফ্লোরেন্স কমাইট। চা এবং জাম জাতীয় ফলের কোনো পার্শ্বপতিক্রিয়া নেই, তবে চকোলেট বুঝেশুনে খেতে হবে। কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কোকো সমৃদ্ধ চকোলেট বার প্রতিদিন এক আউন্স করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৫. ভিটামিন ডি ও ওমেগা ৩ গ্রহন করুন
আমাদের মাঝে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকে, যা অনেক রোগের কারণ হতে পারে। খাবার থেকে কিছু ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় তবে সাধারণত তা যথেষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা ভিটামিন ডি কোনো চর্বিযুক্ত খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন কারণ তা চর্বিতে সহজে মিশে যায়। খাদ্যতালিকায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও রাখা যেতে পারে কারণ গবেষণায় দেখা যায় ওমেগা ৩ হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং মন ভাল রাখে। প্রত্যেকেরই উচিৎ ভিটামিন ডি এর লেভেল অতিসত্ত্বর পরীক্ষা করে ফেলা যাতে বোঝা যায় যে কতটুকু ভিটামিন ডি গ্রহন করা উচিৎ।
৬. পরিমিত পানি পান করুন
আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, প্রয়োজনের বেশী তা পান করা একদমই ঠিক না। পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ স্ট্যানলি গোলফারব বলেন, প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করার জন্য প্রায়শই বলা হয়ে থাকে, তবে এই পরামর্শের উৎপত্তি কোথা থেকে তা স্পষ্ট নয়। গোল্ডফারের ২৭ টি গবেষণায় তিনি দাবি করেন যে অতিরিক্ত পানি পান করলে আপনার শরীরের পদার্থগুলো নষ্ট হয়ে যাবে, ত্বক সুন্দর হবে বা আপনার ওজন হ্রাস পাবে, এমন ব্যাখ্যার কোনো প্রমাণ নেই। তৃষ্ণাই হোক আপনার পানি পানের একমাত্র কারণ। আপনার স্বাস্থ্য এমনিতেই ভাল হলে অতিরিক্ত পানি পান করার কোন দরকার নেই। এছাড়াও, ফল, সবজি, ঠান্ডা কফি, এবং চা আপনার শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কোমল পানীয় জাতীয় খাবার দিয়ে পানির তৃষ্ণা মেটাবেন না।
৭. যতটা সম্ভব, বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন
আপনি যত বেশি সময় বসে থাকবেন, তত বেশি আপনার স্বাস্থ্যেগত ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে - এমনকি যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাও। গত বছর কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বসে থাকা ব্যক্তিরা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ইয়েল প্রিভেনশন রিসার্চ সেন্টারের এমডি ডঃ ডেভিড কাটজ বলেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকলে মস্তিষ্ক ও হৃদয়ে রক্ত প্রবাহ হ্রাস পায়।
৮. সময় করে সোজা হয়ে বসুন
ঘড়ি ধরে দিনে কিছুক্ষন পিঠ একদম ১৮০ ডিগ্রি সোজা হয়ে বসুন এবং স্ট্রেচ করুন। এতে করে পিঠ ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবেন, শ্বাস নিতে সুবিধা হবে এবং কাজ করার শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৯. হালকা ব্যায়াম করুন
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করা উচিৎ। এর জন্য আপনার পছন্দমত দৈহিক কোনো কাজ নির্বাচন করুন এবং দৈনন্দিন কাজের ফাঁকেই অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য তা করুন।
১০. হাসি খুশী থাকুন এবং প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে থাকুন
যতই সমস্যা থাকুক না কেন, সবসময় হাসি খুশী থাকার চেষ্টা করুন এবং অনেক ব্যাস্ততার মাঝেও প্রিয় মানুষদের সময় দিন কারণ গবেষণায় বলে, একা থাকার চেয়ে অনেক মানুষের মাঝে থাকলে সুস্থ্য থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.brunet.ca/en/advices/20-good-habits-that-can-help-you-stay-healthy.html
https://www.bhg.com/health-family/staying-healthy/10-habits-for-a-healthy-life/